যে অশ্রু জাহান্নামের আগুন নেভায়

যে অশ্রু জাহান্নামের আগুন নেভায়

যদি আমরা জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে চাই এবং জান্নাতের স্থায়ী নেয়ামতের আকাঙ্ক্ষী হই, তবে আমাদের সব রকম গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূল (সা.) বলেন, দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না : একটি হলো সেই চোখ, যা রাতের কোনো অংশে আল্লাহতায়ালার ভয়ে কাঁদে এবং দ্বিতীয়টি ওই চোখ, যা আল্লাহতায়ালার পথে পাহারা দিয়ে রাত অতিবাহিত করে (সুনানে তিরমিজি, হাদিস-১৬৪৫)।

এক ব্যক্তি আরজ করল : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কোন জিনিসের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, নিজের চোখের অশ্রুর মাধ্যমে। কেননা, যে চোখ আল্লাহতায়ালার ভয়ে কান্না করে, তাকে জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবে না (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, ৪/ ৯৮)।

তিন লোকের চোখ জাহান্নাম দেখবে না। একটি হলো ওই চোখ যা আল্লাহতায়ালার পথে পাহারা দিল, দ্বিতীয়টি হলো ওই চোখ যা আল্লাহতায়ালার ভয়ে কান্না করে এবং তৃতীয়টি হলো ওই চোখ যা আল্লাহতায়ালার হারামকৃত জিনিসের দিকে দেখা থেকে বিরত থাকে (মু’জামুল কবির, মুসনাদে বাহায বিন হাকীম, হাদিস-১০০৩)।

হজরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে ইরশাদ করতে শুনেছি : হে লোকেরা! কান্না করো। যদি তোমাদের কান্না না আসে তবে কান্না করার চেষ্টা করে কান্না করো, কেননা দোজখিরা দোজখে কান্না করবে, এমনকি তাদের অশ্রু তাদের চেহারায় এমনভাবে বয়ে যাবে, যেন তা নদী, একপর্যায়ে অশ্রু শেষ হয়ে যাবে, অতঃপর তাদের রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং সেই রক্ত এতই বেশি প্রবাহিত হবে, যদি এতে নৌকা চালানো হয়, তবে নৌকা চলবে (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৪১৯৬)।

অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টির পাশাপাশি জান্নাতে যাওয়ার আমলগুলোর মধ্যে একটি আমল হলো মুসলমানের সম্মান ও সম্ভ্রমের হিফাজত করা। সুতরাং যদি আপনার সামনে কোনো লোক কোনো ইসলামি ভাইয়ের দোষ বা তার ভুলের আলোচনা তার উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে শুরু করে এবং শোনাতে যদি কোনো শরিয়তের উপযুক্ত কারণ না থাকে, তবে মুসলমানের সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আখিরাতে সাওয়াব অর্জনের নিয়তে নিজের ইসলামি ভাইয়ের সম্মানের হিফাজত করার ব্যবস্থা করুন।

হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন : যে তার (মুসলমান) ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্মানের নিরাপত্তা বিধান করে তবে আল্লাহতায়ালার দয়াময় দায়িত্ব যে, তিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন (মওসুআতি লি ইবনে আবিদ দুনিয়া, হাদিস-২৪১)। অন্যত্র নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন : যে দুনিয়ায় তার ভাইয়ের সম্মানের হিফাজত করল, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন এক ফিরিশতা প্রেরণ করবেন, যে জাহান্নাম থেকে তাকে হিফাজত করবে (মওসুআতি লি ইবনে আবিদ দুনিয়া, হাদিস-১০৫)।

অনেক সময় ছোট ছোট নেকিও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে স্থায়ী প্রশান্তি অর্জনের উপলক্ষ্য হয়ে যায়। সুতরাং আমাদের উচিত, বেশি বেশি নেক আমল করতে থাকা এবং যে লোকেরা নেকিতে লিপ্ত, তারাও সাবধান থাকুন, শয়তান যেন তাদের এ বিষয়ের ওপর ভরসা করাতে সফল হয়ে না যায়, তুমি তো অনেক নেক আমল করে নিয়েছ, এবার ক্ষান্ত হও, তোমার এ নেকিগুলো তোমাকে ক্ষমা করানো এবং তোমাকে জান্নাতের নেয়ামত অর্জনের জন্য যথেষ্ট। যদি এমন কোনো খেয়াল মনে আসে, তবে তা সঙ্গে সঙ্গেই দূর করে দিতে হবে এবং আল্লাহতায়ালার গোপন ব্যবস্থাপনার প্রতি সর্বদা ভীত থাকতে হবে।

কেননা কেউ জানে না যে, দয়ালু আল্লাহতায়ালার গোপন ব্যবস্থাপনা কার সম্পর্কে কেমন, কেউ তো তার সারা জীবন কুফরে অতিবাহিত করে; কিন্তু মৃত্যুর সময় ইমানের দৌলত দ্বারা ধন্য হয়ে যায় আর কেউ সারা জীবন নেকির মাঝে অতিবাহিত করার পরও বিদায় মন্দভাবে হয়। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের ইমানের ওপর মৃত্যুদান করুক এবং মন্দ মৃত্যু থেকে হিফাজত করুক। আমিন!