লন্ডনে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশ

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা শহীদ জিয়াউর রহমান : তারেক রহমান

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা শহীদ জিয়াউর রহমান : তারেক রহমান

স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন। ২ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি হলে আয়োজিত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের সামনে তারেক রহমান এই প্রস্তাব ঘোষণা করলে নেতা-কর্মীরা জাতির পিতা হিসেবে স্লোগান দিতে থাকেন।

তিনি নেতা-কর্মীদের কাছে শহীদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পিতা হিসেবে ঘোষণা দিলে সবাই একসাথে স্লোগান দিতে থাকে।

তারেক রহমান বলেন, "শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই হলেন সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তি এমন একটি পতাকা নিয়ে আসলেন, এমন একটি পরিচয় নিয়ে আসলেন, যেই পরিচয়ের ছায়তলে সেই মানুষগুলোকে (বিভিন্ন ভাষা-বর্ণের গোষ্ঠী) একটা পরিচিতি দিলেন, সকলকেই তিনি একটা পরিচিতি দিলেন। আমরা হতে পারি বাঙালী, ওরা হতে পারে চাকমা, ওরা হতে পারে মারমা কিন্তু আমরা সকলে বাংলাদেশী।"

তিনি বলেন, "আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শুধু বাঙালী জাত নয়, বাঙালীসহ সারাদেশে যতগুলো জাতি বসবাস করে, যারা বাংলাদেশি জাতির পরিচয় বহন করে, যারা নিজেদের বাংলাদেশি বলে পরিচয় দেয় সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জাতির পিতা, তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জাতির পিতা।"

তারেক রহমান বলেন, "বাংলাদেশে বহু জাতির মানুষের বসবাস। এখানে বাঙালীরা সংখ্যায় বেশি হলেও দেশ গঠনে সকলের অবদান রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালী, অবাঙালী সবাই যুদ্ধ করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর একটি দল তাদের অবদান ভুলে গিয়ে শুধু বাঙালী জাতি হিসেবে পরিচয় দিত। কিন্তু শহীদ জিয়াউর রহমানই সকল জাতির মানুষকে সম্মান দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।"

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ এর পরিচালনায় সভায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, "সারা জাতি একটা কিছু শুনতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যা জাতিকে শুনাতে ব্যর্থ হয়েছিলো ঠিক সেই কথাটি ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে শহীদ জিয়া জাতিকে শুনিয়েছিলেন। তিনি সেদিন স্বাধীনতাকামী জনগণের কাছে দিশারী এবং সাহসের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে।একিভাবে দেশ স্বাধীনের পরে যখন দেশে গণতন্ত্রণ অনুপস্থিত হয়ে পড়েছিলো। দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হলো। '৭৫ পরবর্তীতে শহীদ জিয়া আবারো গণতন্ত্র চর্চা শুরুর মধ্য দিয়ে, বাক স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশের জনগণের কাছে নিজেকে পরিণত করেছিলেন গণতন্ত্র এবং অগ্রযাত্রার প্রতীক হিসেবে।"

বিএনপির কাছে বাংলাদেশ নিরাপদ মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বিএনপির কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ। মানুষের স্বাধীনতা এবং সম্মানও নিরাপদ।"

দলের জন্য, দেশের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, এমনকি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, "গত ১০ বছর ধরে বর্তমান স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের যেসব লক্ষ-লক্ষ নেতা-কর্মী যারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন, হারিয়েছেন অনেক কিছু-তাদেরও একইভাবে আজকের দিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।"

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, "দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত, প্রত্যেকটি মানুষ যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত তারা সবচেয়ে বেশি করে একজন মানুষের অনুপস্থিতি অনুভব করছে। সেই মানুষটি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজকে এই মানুষটিকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কেন বন্দি করে রাখা হয়েছে? বন্দি করে রাখা হয়েছে কারণ এই মানুষটির সঙ্গে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত।যদি এই মানুষটিকে বন্দি করে রাখা যায় তাহলে বন্দি করে রাখা সম্ভব হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে। যদি এই মানুষটিকে বন্দি করে রাখা যায় দাবিয়ে রাখা যাবে মানুষের অধিকারকে। যদি এই মানুষটিকে বন্দি করে রাখা যায় তাহলে মানুষের ধন-সম্পদ লুটপাট করা যাবে।"

তিনি আরো বলেন, "এই মানুষটিকে (খালেদা জিয়াকে) শুধু অন্যায়ভাবে বন্দি করা হয়নি। অত্যন্ত অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে শুধু নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে অবিচার করেছে তার প্রমাণ তারা একদিন দিবে। শুধু তাই নয় আজ প্রমাণিত হয়েছে-বিচার বিভাগের অবিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আজ যারা বিচারপতির আসনে বসে আছেন এরা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তথাকথিত বিচারপতিরা প্রমাণ করেছে এরা বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ নয়। এদের কাছে মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে দলীয় স্বার্থ। এরা নিজেদের বিচারপতির আসনে আর রাখেনি। নিজেদের পরিণত করেছে স্রেফ চাকুরিজীবি হিসেবে। নিজেদের রুপান্তরিত করেছে সরকারি চাকুরিজীবি হিসেবে। আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে যে অবিচার এ বিচারক নামের ব্যক্তিরা করে যাচ্ছে। এবং কত ক'বছর ধরে তারা করেেছ। ইনশাআল্লাহ। সময় এর জবাব একদিন তাদের কাছে থেকে নিবে। সময় বলে দিবে এই চাকুরিজীবিদের কী শাস্তি হওয়া উচিত।"

দেশে বিচারব্যবস্থার অবনতি প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "বিচারালয়গুলো আর বিচারালয় নেই। বাংলাদেশের বিচারালয়গুলো বর্তমানে নৈতিকভাবে এবং আর্থিকভাবে এগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় পাতায় দেখলাম- এই যে নিশি রাতের সরকার, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিপ্রাপ্ত যে স্বৈরাচার সরকার, স্বৈরাচারিনী অবৈধ শেখ হাসিনা- সে একটি কথা বলেছে। বলেছে-যদি বাকশাল থাকতো তাহলে বাংলাদেশ নাকি অনেক আগেই মর্যাদার আসনে আসীন হতো। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আমার জানতে ইচ্ছে করে- শেখ হাসিনা দেশে আসার পরে কতবার তোমরা বাকশালের কথা বলেছো? আজ তোমরা না হয় জোর করে ক্ষমতায় আছো। একবারো তখন তারা বলেনি। কারণ তারা মুখে শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে। আমরা প্রতিবার বলেছি, বহুবার বলেছি, বহু বছর ধরে বলেছি- এই আওয়ামী লীগ নামক দলটি এরা মুখে যা বলে মনে তা তারা বিশ্বাস করেনা। এর বহু প্রমাণ আছে। আজ আবারো প্রমাণিত হলো। মুখে তারা গণতন্ত্র বলে কিন্তু বাস্তবে চায় বাকশাল।"

তিনি বলেন, "বাকশাল করে ১৯৭৪ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) বন্ধ করেছিলো মানুষের মৌলিক অধিকার। কেড়ে নিয়েছিলো মানুষের বাকস্বাধীনতা, কেড়ে নিয়েছিলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কেড়ে নিয়েছিলো গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই বাকশালকে আবার তারা ফিরিয়ে আনতে চায়। কারণ তারা যদি বাকশাল করতে পারে তাহলে তারা জানে তারা যে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে সেই রাজত্ব হয়তো ধরে রাখতে পারবে। এজন্য বিগত বছরগুলোতে যখন তারা ক্ষমতার বাইরে ছিলো একটি বারের জন্যও বাকশালের কথা বলেনি। কারণ এমনিতেই তাদের ভোটের অবস্থা খারাপ। যতবারই তারা সরকার গঠন করেছে বিতর্কিত ভোটের মাধ্যমে সেটা করেছে নিরপেক্ষভাবে তারা কখনো সরকার গঠন করতে পারেনি। তাদের মনের আসল কথা হচ্ছে বাকশাল।"

নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, "আজ আমি নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বলবো-তোমাদের একটু কষ্ট করতে হবে। কষ্ট করে বের করতে হবে কি ছিলো এই বাকশাল। ১৯৭৪ সালের চতুর্থ অ্যামেন্ডম্যান্ট বা বাকশাল কি ছিলো তা তোমাদের বের করতে হবে। কারণ এটি তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য দরকার। আজ যদি বাকশাল থাকে, আজ যদি বাকশাল হয় তাহলে নতুন প্রজন্মের আগামী ভবিষ্যত অন্ধকার। এবং তোমাদেরকেই তোমাদের ভবিষ্যত গড়ে তোলতে হবে। এ জন্য প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে।"

যেখানে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিলো সেখানেই শহীদ জিয়া সফল হয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত অবৈধ হাসিনা ওয়াজেদ সরকার থেকে শুরু করে তার যেসব অবৈধ মন্ত্রীরা রয়েছে তারা সকাল থেকে উঠেই শুরু করবে-"বিএনপি খারাপ","শহীদ জিয়া খারাপ", "খালেদা জিয়া খারাপ", এদের কোনো সমর্থন নেই- বিএনপির জনসমর্থন নেই, শহীদ জিয়ার জনসমর্থন নেই, খালেদা জিয়ার জনসমর্থন নেই। ভালো কথা জনসমর্থন নেই। জনসমর্থন যেহেতু নেই তো আপনাদের মাথাব্যাথার কারণটা কী?

মাথাব্যাথার কারণ একটিই- কারণ যেখানেই আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে সেখানেই শহীদ জিয়া সফল হয়েছেন। মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিলো শহীদ জিয়া সেখানে সফল। সেজন্যই তাদের মাথাব্যাথা শহীদ জিয়া, সেজন্যই তাদের মাথাব্যাথা খালেদা জিয়া। আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছিলো দেশে স্বাধীনের পর মানুষকে অন্ন-বস্ত্র দিতে। দলটি ব্যর্থ হয়েছিলো মানুষের মৌলিক অধিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। শহীদ জিয়া যখন মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন তখন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার। মানুষকে দিয়েছিলেন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের সুযোগ। এটা জানে বলেই সকাল থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ‌্যাচার শুরু করে দলটি। তারা জানে যদি বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যায় তাহলেই সম্ভব জনগণের অধিকার হরণ করা।"

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "বিএনপিকে দাবিয়ে রাখতে পারলেই বাংলাদেশের স্বার্থ বিদেশের কাছে জলাঞ্জলি দিতে পারবে আওয়ামী লীগ। এ কথা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আপনারা এরি মধ্যে দেখেছেন আমাদের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রতিবেশি একটি দেশ ঢুকে গিয়ে জায়গা-জমি দখল করে নিয়েছে কিন্তু এই অবৈধ সরকারের কোনো রকমের পদক্ষেপ নেই, কোনো রকমের বক্তব্য বলে কিছু নেই। এটাই প্রমাণ করে এদের কাছে সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়, নিরাপদে নেই বাংলাদেশ, দেশের মানুষ ও স্বাধীনতা। এটি সূর্যের মতো প্রমাণিত সত্য। বিএনপিকে যদি দাবিয়ে রাখা যায় তাহলে এদের দ্বারা সম্ভব এই লুটপাটের নীতিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া।"

সকাল হলেই জাতিকে সরকারের মিথ্যা গল্প শুনতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সকাল হলেই আমাদের মিথ্যা গল্প শুনতে হয়। জিডিপির গল্প, রোল মডেলের গল্প। ২০১২ থেকে ২০১৯ সালে সরকারি হিসেবে বড় বড় শিল্প দেশে কমেছে ৬০৮ টি। ২০১২ থেকে ২০১৮ তে মাঝারি ধরনের শিল্প কমেছে ৩,০৮৯ টি। এই হচ্ছে উনাদের জিডিপি। যে শহীদ জিয়ার সময় দেশের মানুষ বিদেশে চাল রপ্তানি করেছিলো, যে দেশের চাল পৃথিবী বিখ্যাত সেই দেশে দুই কোটি মানুষ প্রতিদিন সঠিকভাবে খেতে পারেনা। এই হচ্ছে গত ১০ বছর ধরে তাদের শাসন! এই হচ্ছে তাদের গত ১০ বছরের রোল মডেল! এই এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে অর্ধেকেরও বেশী। বর্তমানে বাংলাদেশে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ১,১২,০০০। এফবিআই রাষ্ট্রীয় মদদে রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়েছে। কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন বালিশ নিয়ে দুর্নীতি। ক'দিন আগে দেখা গেলো ডাক্তারদের ৩,০০০ টাকার স্টেথোস্কোপ কেনা হয়েছে ১,১২,০০০টাকা দিয়ে।কালকে দেখলাম ৫,০০০ টাকার বই কেনা হয়েছে ৮৫,০০০ টাকা দিয়ে। ব্রীজ। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি গ্রামে-গঞ্জে বিএনপির উন্নয়ন। কোনদিন দেখিনি গ্রামে-গঞ্জে ব্রীজের রেলিং বাঁশ দিয়ে তৈরি করতে। এখন দেখা যায় উন্নয়নের রোল মডেলে ব্রীজের রেলিং বাঁশ দিয়ে তৈরি করে!"

তারেক রহমান বলেন, "সবচাইতে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে এসব বাঁশ দিয়ে তৈরি রেলিং ভেঙ্গে মানুষ মারা যাচ্ছে। আজকে উনাদের (সরকারের) রোল মডেলে ঢাকা নগরী একদম নিচের দিক থেকে ৫ম অনিরাপদ নগরীতে পরিণত হয়েছে।দেশ আজ এমনি রোল মডেল যে সামান্য দুধ পরীক্ষার জন্যও তা ভারত পাঠাতে হয়।"

আওয়ামী লীগ মানেই ন্যায়হীনতা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "আওয়ামী লীগ মানেই হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনের অপশাসন। আওয়ামী লীগের অপর নাম হয়েছে গুম-খুন। আওয়ামী লীগের অর্থই হয়ে দাঁড়িয়েছে ব‌্যাংকের অর্থ পাচার, আওয়ামী লীগ মানেই দাঁড়িয়েছে ভোট ডাকাতি, আওয়ামী লীগ মানেই শেয়ার বাজার লুন্ঠন, আওয়ামী লীগ মানেই হলো পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়া, আওয়ামী লীগ মানেই দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীনদের অন্যতম বিনোদন হলো নারী ধর্ষণ বা নারী নির্যাতন, আওয়ামী লীগ মানেই দাঁড়িয়েছে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে ধানে আগুন ধরিয়ে দেয়া।"

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, "প্রতিটি কাজেই একগুয়েমি করে এই নিশি রাতে সরকার দেশকে একটা বিপদজনক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশে শত শত গুম-খুন-হত্যা করে কেউ যদি রোহিঙ্গা ইস্যুকে ব্যবহার করে নিজের খুনির ইমেজ পরিবর্তন করতে চায়- এটা কী সম্ভব? এটা সম্ভব নয়। বরং এটা করতে এই ইস্যুটিকে আরো জটিল করে তোলেছে অপরিণামদর্শী এই অপরিপক্ক সরকার। এই রােহিঙ্গা ইস্যু কোনো দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নয়। এটা তার চাইতেও অনেক বড় সমস্যা। আমরা যা দেখছি তা হলো এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে আজ কেউ নেই। কেউ এগিয়ে আসছে না বাংলাদেশকে সাহায্য, সহযোগিতা করার জন্য, এই সমস্যা থেকে বের করার জন্য। কেন? কারণ সমগ্র পৃথিবী জানে- এরা নিশি রাতের সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার। এদের পেছনে জনগণের কোনো ম্যান্ডেন্ট নেই। জনগণের কোনো ভিত্তির উপরে নেই সেজন্য এদের দিকে কেউ তাকিয়েও আসেনা। সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনা। এবং সে কারণে গত দুই বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়নি। দেশকে এবং জনগণকে যদি এই পরিস্থিতি এবং সংকট থেকে বের হয়ে আনতে হয় হলে জনগণের দাবি, সময়ের দাবি হলো সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা।"

তিনি আরো বলেন, "শুধু সর্বদলীয় বৈঠক নয়। মূল পদক্ষেপ যেটি নিতে হবে সেটি হলো- সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৪ সালে সফলতার সাথে এই রোহিঙ্গ সমস্যার সমাধান করেছিলেন। অবশ্যই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এবং অবশ্যই এই বৈঠকের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।কারণ এটি হচ্ছে সময়ের দাবি।"

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, "আজকে দেশের এই অস্তিত্ব সংকট মুহূর্তে কিছু সংখ্যক লোককে একটি কথা বলতে চাই। যারা নিরাপদ দূরত্বে থেকে অনেক সময় বলেন বা অনেক সময় বিএনপির ব্যর্থতা খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন তাদেরকে বলবো, তাদেরকে অনুরোধ করবো- দেখুন রাজনৈতিক আন্দোলন, সফলতা বা ব্যর্থতা, আন্দোলনের গতিতে জোয়ার বা ভাটা কিংবা নানা কৌশল থাকবে। থাকতেই পারে। কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতার উপর সব দোষ দিয়ে আমরা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করে দিতে পারিনা। রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করতে দেয়া যায়না। কারণ আজ আপনি হয়তাে নিরাপদ দূরত্বে থেকে এই সমালোচনা করছেন কিন্তু অবস্থা যদি এইরকম হয় রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়ে যায়, সেদিন কিন্তু আপনার এই নিরাপদ অবস্থান নিরাপদ নাও থাকতে পারে।তাই নিজের স্বার্থে যারা সমালোচনা করছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো, আহবান করবো নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে বসে থাকবেননা। এগিয়ে আসুন- দেশের, রাষ্ট্রের আজ ভীষণভাবে প্রয়োজন আপনার সহযোগিতা, আপনার সাহায্য, আপনার উপস্থিতি।"

তিনি আরো বলেন, "এই দেশটা আপনার, দেশটা আপনাদের, দেশটা আমাদের সকলের। কাজেই সকলে এগিয়ে আসতে হবে। হতে হবে ঐক‌্যবদ্ধ। সকলকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।"

গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন করার জন্য খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, "বিএনপির একমাত্র লক্ষ‌্য হলো বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তোলা যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচার থাকবে। যেখানে থাকবে আইনের শাসন, মানুষের মৌলিক অধিকার। এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া কখনো আপোষ করেননি।"

তিনি বলেন, "শুধু খালেদা জিয়াই বন্দি নন। গণতন্ত্রের এ আন্দোলনে বন্দী আজ হাজার হাজার কর্মী ভাইয়েরা। শত শত নেতা-কর্মী গুম ও খুনের শিকার। লক্ষ-লক্ষ নেতা-কর্মী গায়েবি মামলা ও নির্যাতনের শিকার।তারপরও এ দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে আছে। তারা গণতন্ত্র উদ্ধারের যুদ্ধ থেকে পেছনে ফিরে আসেনি। আজ এটাই প্রমাণিত হয়েছে দূরে বসে সমালোচনা করা সহজ ব্যাপার কিন্তু রাজপথে থেকে প্রতিবাদ করা অনেক কঠিন ব্যাপার। সেই কঠিন কাজটিই নেতা-কর্মীরা সাহসের সঙ্গে করে যাচ্ছেন।"

বিএনপি দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে একমাত্র প্রমাণিত দল বিষয়টি আজ প্রমাণিত হয়েছে। এ দলের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জিএস/