বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লন্ডনে স্মরণকালের বৃহত্তম গণজমায়েত

বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লন্ডনে স্মরণকালের বৃহত্তম গণজমায়েত

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরেকটি নজিরবিহীন দৃশ্যের সাক্ষী হলো যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর। সেসময় প্রবাসি বাংলাদেশিরা স্বাধীনতার স্বপক্ষে দাবি তুলেছিলেন। দেশ স্বাধীন হবার পাঁচ দশক পেরুলেও বাংলাদেশিদের দেশের বাইরেও আজ লড়তে হচ্ছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের অধিকার আদায়ে। মঙ্গলবারের লন্ডনের চিত্রটা ছিলো পুরোই ভিন্ন। হঠাৎ করে দেখলে কেউ বাংলাদেশ ভেবে ভুল করে বসবে। নিজ দেশের নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে লন্ডনের রাজপথে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলো হাজার, হাজার বাংলাদেশি। 'এক দফা, এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ,' 'স্বৈরাচার নিপাত যাক,' 'খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই,' 'টেইক ব্যাক বাংলাদেশ,' 'উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি,' 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'-এরকম নানান স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিলো লন্ডনের রাজপথ। সকাল ১১ টা থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে ভীড় জমাতে থাকেন লন্ডনের হাইড পার্কে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি ও দু:শাসনের নানা চিত্র সম্বলিত ব্যানার, ফ্যাষ্টুন সঙ্গে নিয়ে লন্ডনের বিভিন্ন সড়ক ধরে জড়ো হন সেখানে। যুক্তরাজ্য বিএনপি 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজন করলেও তাতে অংশ নেয় সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক সংগঠন, সাধারণ মানুষসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ। 

গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এবং মানবাধিকারের দাবিতে বিএনপির এই পদযাত্রায় ছিলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। পথের দূরত্ব আর ক্লান্তি ভুলে সব বয়সের মানুষেরা এসে মিলিত হন এক জায়গায়, যোগ দেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির সেই পদযাত্রায়।

লন্ডনের হাইডপার্কের স্পিকার্স কর্নার থেকে পদযাত্রাটি যাত্রা শুরু করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের দিকে। হাজার, হাজার প্রবাসীর ভীড় সামাল দিতে এসময় হিমশিম খেতে দেখা যায় দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের। পদাযাত্রায় অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা তাদের পদযাত্রার পুরোটা সময় জুড়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চাপ প্রয়োগ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানান দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, সেক্রেটারি কয়সর আহমদ এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমানসহ দলটির অসংখ্য নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।  

হাজার, হাজার বিক্ষোভকারীর অংশগ্রহণে পদাযাত্রাটি লন্ডনের বিভিন্ন রাজপথ ঘুরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসবভন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়ে শেষ হয়। এরপর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এবং সেক্রেটারি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বরাবর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে দেশটির পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়ে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়। এসময় যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর অফিস বিএনপির দেয়া স্মারকলিপি গ্রহণ করে।

পদযাত্রায় অংশ নিয়ে যুুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর গণতন্ত্রের দাবিতে এই পথম বৃটেন প্রবাসি বাংলাদেশিদের এত বড় জমায়েত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। 

তিনি বলেন, আমরা বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছি তারা যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়ে চাপ তৈরি করে। বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। 

আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশে স্বৈরশাসক থাকবে এটা আমরা চাইনা। আমাদের একটাই দাবি শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক অথবা জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

যুুক্তরাজ্য বিএনপির সেক্রেটারি কয়সর আহমেদ বলেন, পদযাত্রায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসি বাংলাদেশিরা এসে যোগ দিয়েছে। তারা শুধু একটি দাবি নিয়ে এখানে অংশ নিয়েছে আর তা হলো- দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। তার পদত্যাগের পর একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন হবে যেখানে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে।