ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে লেখা এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনে গত ৪৮ ঘন্টায় কেবল ঢাকাতেই নিজেদের র্যাবের লোক দাবি করা বাসা থেকে তোলে আনা হয়েছে লেখক, কার্টুনিস্টসহ ৩ জনকে। এর মধ্যে শুধু কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আর এখনো সন্ধান মেলেনি রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের অন্যতম সংগঠক দিদার ভুঁইয়ার।
এদিকে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে র্যাব-৩ প্রবাসী সাংবাদিক, কার্টুনিস্টসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা করেছে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে, কার্টুনিস্ট আহম্মেদ কবির কিশোর, ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য মো দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, মিনহাজ মান্নান, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে।
রাতে মামলার পরই গ্রেফতার হন কিশোর ও মুশতাক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের করা হয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে।
তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা দায়ের করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব-৩।
গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে রাতেই রমনা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, কিশোরকে কাকরাইল এলাকা থেকে এবং মুশতাক আহমেদকে লালমাটিয়া থেকে আটক করেছে র্যাব।
"ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে র্যাব একটি মামলা করেছে গত রাতে। তার ভিত্তিতেই এই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
'আমি কিশোর' নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কার্টুনিস্ট কিশোর নিজের আঁকা কার্টুন ও পোষ্টার শেয়ার করতেন।
এপ্রিল মাসের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫০জনকে আটক করা হয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বিভিন্ন মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
দিদারুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় যেভাবে
রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়াকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
দিদারের পারিবারিক সূত্র জানায়, ইফতারের আগে দুটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে কিছু মানুষ আসে। তারা সাদা পোশাকে থাকলেও নিজেদের র্যাব-৩ এর সদস্য পরিচয় দেয়। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে গেছে।
অনলাইনে রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় সম্পর্কে বলা আছে, ‘একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও গণক্ষমতাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সংকট চিহ্নিত করা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সম্ভাব্য পথ অনুসন্ধান করার একটি উদ্যোগ।’
দিদারুল ভূঁইয়া অনলাইনে ত্রাণ তহবিলের অর্থ বণ্টন, মাস্ক ও করোনা মোকাবিলা প্রসঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে লেখালেখি করতেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের সহযোগী দিদারুল। তবে যতদূর জানি, তাকে এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।’