ঢাকা, ১৮ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলটি করেন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী নওশাদ জমির। পরে নওশাদ জমির গণমাধ্যমকে বলেন, আপিলে সাজার রায় বাতিল চেয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে খালাসের আরজি জানানো হয়েছে। এতে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করতে, অর্থদণ্ড স্থগিত ও বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আরজিও রয়েছে। শিগগিরই আপিল গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য হাইকোর্টে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
গত ২৯ অক্টোবর ওই মামলায় রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামিকেও সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রত্যেককে দশ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেন খালেদা জিয়া।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় হয়েছে।
২৪টি যুক্তিতে আপিলটি করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী নওশাদ জমির। তিনি বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি ট্রাস্ট, এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটি পরিচালিত হয় ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইন দিয়ে। তাই ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ওই ট্রাস্টে অর্থ দিয়েছেন বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাই এখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ নেই, কেননা আইনের ৫(২) ধারা অনুসারে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে বেগম খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই সাজা বাতিল চাওয়া হয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অপর তিন আসামি হলেন, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও বিএনপির নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মনিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক। অপর দুই আসামি জিয়াউল ও মনিরুল কারাগারে আছেন।
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বিচারিক আদালত। আদালতের রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন, যার ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন অর্থাৎ গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে এর আগে বেগম খালেদা জিয়ার করা রিট গত ৪ অক্টোবর কিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশের পর চিকিৎসার জন্য ৬ অক্টোবর তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর ৮ নভেম্বর বিএসএমএমইউ থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৮০৩ঘ.)
