‘আশাহত’ সিইসি

‘আশাহত’ সিইসি

ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত ‘ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি’র (নির্বাচনী তদন্ত কমিটি) কার্যক্রমে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।

বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ তোলেন সিইসি। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং সহকারী জজের ২৪৪ জন ওই ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।

জজদের উদ্দেশে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আপনাদের ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। তার মানে, আপনারা এখন পর্যন্ত কিন্তু ভিজিবল হননি। বাস্তবতা হলো সেটা। ভিজিবল যখন হবেন, আপনাদের কাজের মাধ্যমে (মানুষ) যখন আস্থা রাখবে, আপনাদের যখন চিনবে, তখন থেকে আপনাদের ওপরে দায়িত্ব আসবে। তখন আর আমাদের ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে শত শত অভিযোগ আসবে না।’

‘আমরা প্রত্যেক দিন শত শত অভিযোগ পাই। কিন্তু অভিযোগগুলো আমাদের কাছে আসার কথা না। কারণ, আপনারা সেখানে (মাঠ পর্যায়ে) রয়েছেন। আমরা কী করব? অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। প্রয়োজন ছিল অভিযোগগুলো সরাসরি আপনাদের কাছে যাবে। তা যায় না। ২০০৮ সাল থেকে যে নতুন একটা দায়িত্ব আপনাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের প্রত্যেকের ওপরে কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আপনাদের ওপরে আগে হয়নি। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে,’ বলেন সিইসি।

সিইসি আরো বলেন, ‘যিনি আপনাদের কথা শুনবেন না, প্যানেল কোর্টের ১৯৩ ধারামতে তাদের সাত বছরের জেল হবে। যদি মিথ্যা তথ্য দেয় এবং আপনাদের আদেশ না মানে, প্যানেল কোর্টের ২২৮ ধারা অনুসারে তাদের বিচার হবে। তার মানে হলো কোড অব সিভিল প্রসিডিউরের ১৯০৮-এর সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আপনারা মাঠে অবস্থান করবেন। এটা আপনাদের প্রকৃত শক্তি, যেটা আপনাদের চেম্বারে নয়, মাঠে। সমস্যার মুখোমুখি, প্রার্থীদের মুখোমুখি, আচরণবিধি যারা ভঙ্গ করবে তাদের মুখোমুখি, আপনাদের ওপরে অন্য রকম অভিজ্ঞতা। এটা অন্য রকম পরিবেশ বা অন্য রকম দায়িত্ব আপনাদের ওপরে অর্পিত হয়েছে। এটাকে আপনাদের ভালোভাবে দেখভাল করা দরকার।’

মানুষের কাছে সহজেই সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই বিচারকদের এ কাজে সংযুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘তারা যেন তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এখানে ওখানে ছোটাছুটি করার প্রয়োজন মনে না করেন। আপনাদের সামনে পেয়ে তাঁরা যেন অভিযোগ পেশ করতে পারেন। আপনাদের প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে, ভাইব্রান্ট হতে হবে এবং আপনাদের জানতে হবে যে, তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য আপনারা আছেন। ৩০০টি আসনের মধ্যে ১২২টি জায়গায় আপনারা তাদের কাছাকাছি আছেন। তারা যেন সমস্যার সমাধান পায়, এটা আপনাদের দেখতে হবে।’

নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রতি আশাহত হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, ২৫ নভেম্বর যখন এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল, আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রত্যেকটি কমিটি অন্তত ১২২টি অভিযোগ তদন্ত করার কথা ছিল। এটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল। ১০০টা তদন্ত করার প্রত্যাশা ছিল। ১০০টা বাদ দিলাম, ২২টি তদন্ত করার প্রত্যাশা ছিল। তা হয়নি। কারণ সেটাই, এখন পর্যন্ত আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে গুছিয়ে উঠতে পারেননি।’

‘আজকে থেকে, এখান থেকে, আপনাদের কী করণীয়, দায়িত্ব এবং কীভাবে এই কমিটি পরিচালিত হবে জেনেশুনে, ফিরে গিয়ে তদন্ত করবেন। মানুষের অভিযোগগুলো শুনবেন, আমলে নেবেন এবং তাদের রিলিফ দেবেন। যাতে তারা তাদের জায়গায় বসে, এলাকায় থেকে, ঢাকা পর্যন্ত না এসে আপনাদের কাছ থেকে, পাশে থেকে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন,’ নির্দেশ দেন সিইসি।

ইসি সচিবসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্রিফিংয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৪৪৫ঘ.)