ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এবার সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৮১টি প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা ২০০১ সালের নির্বাচনের তুলনায় আট ভাগের এক ভাগ এবং ২০০৮ সালের তুলনায় ছয় ভাগের এক ভাগ কম।
আন্তর্জাতিক কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা আদৌ এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের কোনো সংগঠন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আগেই এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বলতে ফোরাম অব দি ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা), ভারত, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন ও কমনওয়েলথ-এর কয়েক জন সদস্যকে দেখা যেতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের নথি থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের নির্বাচনে ২ লাখ ১৮ হাজার দেশি এবং ২২৫ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন এবং বিদেশি ৫৯৩ জন। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষক ছিল ৮ হাজার ৮৭৪ জন। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন ফেমবোসার ৪ জন।
ইসি সচিবালয় থেকে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ৮১টি প্রতিষ্ঠান ৩৪ হাজার ৬৭১ জন পর্যবেক্ষকের জন্য ইসিতে আবেদন করে। সেখান থেকে ইসি বাছাই করে আজ শনিবার ২৫ হাজার ৯২০ জন দেশি পর্যবেক্ষকদের তালিকা অনুমোদন করেছে। এদের মধ্যে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) ২২টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ হাজার পর্যবেক্ষক রয়েছে। কিন্তু সরকারের এনজিও ব্যুরোর নীতিমালার কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় পরিসরে পর্যবেক্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
ইডব্লিউজি সূত্র জানায়, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী যে সব প্রতিষ্ঠান বিদেশি অনুদান পেয়ে থাকে, তাদের টাকা ছাড়ের জন্য এনজিও ব্যুরো থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। ইডব্লিউজির প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা পেয়ে থাকে এশিয়া ফাউন্ডেশন, ইউকেএইড ও ইউএসএইড থেকে। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণের টাকা ছাড় করাতে হলে এনজিও ব্যুরো থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এনজিও ব্যুরো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনাপত্তিপত্র দেয়নি। তারা বলেছে, ইসি অনুমতি দিলে তারা ছাড়পত্র দেবে।
ইডব্লিউজির নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল শনিবার এ বিষয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আশা করা যায় এনজিও ব্যুরো আগামীকাল রবিবার অনাপত্তিপত্র দিতে পারে। না দিলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এলাকা ও আকার সংক্ষিপ্ত করে আনতে হবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ, লাইট হাউস, খান ফাউন্ডেশন ও ডেমোক্রেসি ওয়াচের বিষয়ে এবং বিএনপি জানিপপকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি না দেওয়ার আবেদন করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আপত্তি জানানো হলেও এই সংস্থাগুলো ইসিতে নিবন্ধিত। আইনগতভাবে নিবন্ধন বাতিল করা জটিল প্রক্রিয়া। যেহেতু তারা ইসিতে নিবন্ধিত তাই তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত রাখা যাবে না। তবে একটু জেনে শুনে বুঝে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক নগণ্য
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল সাকল্যে ৪ জন। এবার যে আলামত দেখা যাচ্ছে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা সামান্য বাড়তে পারে। তবে এই জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যথাসময়ে ছাড়পত্র ও ভিসা না দেওয়ায় তাদের সংগঠনগুলো এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা না করায় তাদের ব্যাংককভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা দ্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এনফ্রেল) নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) মাধ্যমে এনফ্রেলকে অর্থায়ন করে থাকে। সূত্র: প্রথম আলো
(জাস্ট নিউজ/একে/২৩২৯ঘ.)