‘আগে ভোট হত নির্বাচনের দিন, এখন হয় আগের দিন’

‘আগে ভোট হত নির্বাচনের দিন, এখন হয় আগের দিন’

মজুরি বোর্ড, বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ এর নেতৃবৃন্দের ভুলের কারণে আনসারের গুলিতে শ্রমিক সুমনের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, ‘তাদের নামে মামলা হওয়া উচিত।’

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিকফ্রন্টের ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ওসমান আলী বলেন, ‘আজকে শ্রমিক আন্দোলন করছে তাদের দাবির জন্য। ভুল করেছে আজকের মজুরি বোর্ড, ভুল করেছে বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ, আর তার খেসারত শ্রমিকদের দিতে হবে কেন? আমি এই সমাবেশ থেকে তার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। আমরা ৩৭ বছর পূর্বে বলেছিলাম এই সমাজ ব্যাবস্থা টিকিয়ে রেখে এই দেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি আসবে না। আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। আগে জাল ভোট হত, এখন রাতে অন্ধকারে ভোট হয়। আগে ভোট হত নির্বাচনের দিন, এখন ভোট হয় নির্বাচনের আগের দিন। এই হচ্ছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।’

‘শ্রম আইন শ্রমিকদের পক্ষে তৈরি করে নাই, শ্রম আইন মালিকদের পক্ষে তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই আইন হয়েছে। শ্রম আইনের যত কালো (এটা কিন্তু কালোই হবে, কলা নয়। অন্ধকার) কানুন এ পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে, পরিষ্কার করে তা বাতিল করতে হবে। যে সমস্ত শ্রম আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আজকে সেই শিকল ভেঙে সারা দেশের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘এই সমাজের যা কিছু সম্পদ তৈরি হয় শ্রমিকের শ্রমে আর ঘামে। আর এই সমাজের সবচেয়ে বেশি লাঞ্চিত হয় শ্রমিক এবং কৃষকরা। উন্নয়নের মহাসড়কের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত আমরা দেখছি। একদিকে ফ্লাইওভার দেখছি, সুউচ্চ ভবন দেখছি কিন্তু আরেক দিকে শ্রমিকদের জীবন কিভাবে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে তার খবর কি আমরা রাখছি?’

তিনি আরো বলেন, ‘একদিকে উন্নয়নের নামের লুণ্ঠন আরেক দিকে শ্রমজীবী মানুষদের দমন একই সঙ্গে চলছে। আমাদের বাংলাদেশের প্রায় ৪০০ ধরনের খাত আছে। এর মধ্যে ৪৩ টা খাতের মজুরি নির্ধারণ করা হয় মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে। এই মজুরি বোর্ডে একজন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্বতন্ত্র সদস্যরা থাকেন। তারা যে মজুরি নির্ধারণ করেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এই মজুরি দিয়ে একজন মানুষ কিভাবে তার স্বাধীন মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে।’

সমাবেশ থেকে শ্রম আইনের গণতান্ত্রিক ধারা সমূহ বাতিল, ট্রেড ইউনিয়ন করার গণতান্ত্রিক অধিকার, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ, মজুরি গ্রেড ও মাতৃত্বকালীন ছুটির বৈষম্য দূর করা, সড়ক পরিবহন আইনের শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা সমূহ বাতিল করা, কর্ম ক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুতে আজীবন আর সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান, শ্রমিক ছাঁটাই, গ্রেফতার এবং মিথ্যা মামলা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন- শ্রমিক ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবীব বুলবুল এবং দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রিপন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি লাল পতাকা মিছিল নিয়ে পল্টন এলাকায় প্রদক্ষিণ করে তারা।

এমআই