টিআইবি’র অবস্থান একচোখা: দুদক চেয়ারম্যান

টিআইবি’র অবস্থান একচোখা: দুদক চেয়ারম্যান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নীতি একচোখা বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জেনেভাভিত্তিক নীতি ও কৌশল বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস বস-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন দুদক চেয়ারম্যান।

এসময় বাংলাদেশের পরামর্শক মাহিন সুলতান ও টিআইবি’র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাফর সাদিক উপস্থিত ছিলেন।

টিআইবি’র কর্মকাণ্ড নিয়ে এদেশের মানুষের মূল্যায়ন, দুদক-টিআইবি সম্পর্কের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে মতামত জানতে চান ম্যাথিয়াস বস। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘টিআইবি’র ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। তবে কিছু সমালোচনাও শোনা যায়। টিআইবি দেশের শাসন প্রক্রিয়া তথা সরকার ও সরকারি সংস্থার যে কোনও ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই উচ্চকণ্ঠ থাকে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু সম্যসা বা ত্রুটি তুলে ধরা টিআইবি’র কাজ হতে পারে না, বরং এসব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার সুযোগও তাদের রয়েছে। সমস্যা শনাক্তের পাশাপাশি এর কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি, এমনকি বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত প্রতিটি সংস্থারই অর্থের মালিক জনগণ। তাই টিআইবিসহ প্রতিটি সংস্থার বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। তাদের আয়-ব্যয়, কর্মপরিকল্পনা, অডিট কার্যক্রম শুধু ওয়েবসাইটে না রেখে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমেও জানানো দরকার।’

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের সঙ্গে টিআইবি’র আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ, এটা বেশ ফলপ্রসূ। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং উত্তম চর্চার বিকাশে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকেই টিআইবি’র সঙ্গে যৌথভাবে গণশুনানিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দুদকের কার্যক্রম নিয়ে টিআইবি’র সমালোচনাকে দুদক সবসময় সাধুবাদ জানায়। তবে দুদক বা অন্য কোনও সংস্থার সমালোচনা করতে হলে তাদেরকে দেশের সমসাময়িক বাস্তবতা, পরিস্থিতি এবং সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে হবে। সমালোচনার সঙ্গে পরিত্রাণের উপায়ও বলতে হবে। সরকার বা সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দল কোনও ভালো কাজ করলে তার প্রশংসাও করা উচিত। তাদের একচোখা হলে চলবে না, দুচোখা হতে হবে।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘টিআইবি যাদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়, তাদের অবশ্যই প্রত্যাশা থাকে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সুশাসনের উন্নয়নে টিআইবি ভূমিক রাখবে। টিআইবি সরকার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিতে পারে।’

টিআইবি’র গবেষণা নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিআইবি’র গবেষণার মেথডোলোজি স্বচ্ছ হতে হবে। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাধ্যমিক ডাটা (সেকেন্ডারি ডাটা) ব্যবহার করে, অথবা ফোকাস গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করে। তাদের উচিত প্রাথমিক ডাটা (প্রাইমারি ডাটা) ব্যবহার করা। তাহলে গবেষণার ফলাফল ও বিশ্লেষণে ত্রুটি কম থাকবে এবং প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি বলেন, ‘টিআইবি’র একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি থাকা উচিত। সব বিষয়ে টিআইবি’র কথা বলা কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকা উচিত।’

সিপিডি, বেলাসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে টিআইবি’র যৌথ সম্পর্কের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ার‌্যম্যান বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

এমআই