শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন (ভিডিও)

শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন (ভিডিও)

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খুশি করতে ছাত্রীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করানোর অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, সোমবার রাতে নৃত্য পরিবেশন ছাড়াও স্কুলের ভেতর চলেছে ভুরিভোজ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন ও প্রস্তাবিত মৌডুবি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক জহিরুল ইসলাম টুকু।

মূলত জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইনের জন্যই এত আয়োজন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকেই স্কুলের একটি কক্ষে কয়েকজন ছাত্রীকে দিয়ে নাচ করাচ্ছিলেন কর্তৃপক্ষ। এর একটি ভিডিও এখন ঘুরে ফিরছে রাঙ্গাবালীর বাসিন্দাদের মোবাইলে মোবাইলে। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সাউন্ডবক্সে বাজছে ‘ও লাড়কা আখ মারে’ গান, আর তালে তালে নেচে যাচ্ছে হলুদ হিজাব পরা এক ছাত্রী।

নাচ ও গানের তালে মাতোয়ারা হয়ে আছেন উপস্থিত সকলেই। টানা দুই ঘণ্টা চলে এই এমন আয়োজন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমানের হস্তক্ষেপে নাচ-গান বন্ধ হয়। এরপর শুরু হয় ভুরিভোজ।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকদের ত্রৈমাসিক সভা ও দুদকের সততা সংঘের সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নিতে আসেন পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

পরে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে নৈশ ভোজ ও রাত্রি যাপনের জন্য উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান জাহাঙ্গীর হোসাইন। তিনি আসবেন বলেই আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। তাকে খুশি করতে রাতে ছাত্রীদের বাড়ি থেকে জরুরি ভিত্তিতে খবর দিয়ে এনে এ আয়োজন করেন শিক্ষকরা। রাত ৯টায় অনুষ্ঠান শেষ করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নৈশভোজ করে ওই বিদ্যালয়ে রাত্রিযাপন করেন।

আয়োজনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষের জরুরি খবর পেয়ে অন্তত ৩০ জন ছাত্রী ও ২০ জন ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। পরে সেখানে নৃত্যের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় চিত্রশিল্পী শাহ আলম বলেন, ‘অফিসারকে খুশি করতে এভাবে রাতে ছাত্রীদের দিয়ে নাচগান করানো ঠিক হয়নি। এটা আমাদের কালচার নয়।’

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে মৌডুবি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার আসছেন। তাই কয়েকটা মেয়ে ও ছেলেরা সাংস্কৃতিক গান গেয়েছে। তাও একটা রুমের মধ্যে। বাইরেও না, রুমের ভেতরে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘নতুন একটা মাদ্রাসা হয়েছে, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেটা পরিদর্শনে গেছে। পরে রাতে মৌডুবি স্কুলে অবস্থান করেছেন। ওই স্কুলে ২৬ মার্চ উদযাপন করেছে, পুরষ্কার বিতরণ করে নাই। ওই স্কুলের শিক্ষকরা স্যারকে সেই পুরষ্কার বিতরণের জন্য বলছে। আর তাদের ছেলেমেয়েরা নাচ ও গান করবে বলেছে।’

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘না, কোনো প্রোগ্রাম ছিল না।’ তার উপস্থিতি ও সেই রাতের ভিডিও রয়েছে বললে তিনি বলেন, ‘এটা ওখানকার স্থানীয় বাচ্চারা, ওরা নিজেরা একটু করছে। কোনো সমস্যা আছে? স্কুলে রাতের বেলায় কক্ষের মধ্যে হলে সমস্যা কী? বেআইনি কিছু হয়েছে কি না? আয়োজন আমি করিনি। এটা প্রতিষ্ঠান করছে। প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করেন। প্রতিষ্ঠানের ছেলে-পেলে করেছে, আমি ওদেরকে দুই-একটা উপদেশ বাণী দিয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান জানান, ‘বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ওই আয়োজন বন্ধের জন্য বলেছি, সে অনুযায়ী আয়োজনটি বন্ধ করা হয়। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানব।’

এমজে/