সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান এম এ খানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান এম এ খানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ মঙ্গলবার সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান ও যোগাযোগ উপদেষ্টা ও কৃষি মন্ত্রী রিয়ার এ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিন দশক আগে এই দিনটিতে জীবনের শেষ মুহূর্তটুকুও নিপীড়িত স্বদেশবাসীর সেবায় উৎসর্গ করেছিলেন।

১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট সকালে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভূপাতিত হলে মাহবুব আলী খান সেই স্থান পরিদর্শনে যান। সে সময় তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে এই নির্ভীক দেশপ্রেমিকের জীবনাবসান হয়। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সকালে মরহুমের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খতম ও বিশেষ মোনাজাত। মরহুমের জন্মভূমি সিলেটে মাহবুব আলী খানের পরিবারের পক্ষ থেকে তার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার বিরাহিমপুরে বাদ যোহর এক মিলাদ মাহফিল ও দুস্তদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি মাহবুব আলী খান স্মৃতি পরিষদ হজরত শাহ জালাল (রহ:) ও হজরত শাহ পরানের (রহ:) দরগা শরিফে বিশেষ মুনাজাত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এছাড়া মরহুমের বাসভবন মাহবুব ভবনে (বাসা-৪০, সড়ক-০৫, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা) কুরআনের তাফসির ও বাদ মাগরিব দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বেগম মাহবুব আলী খান মরহুমের আত্মীয় স্বজন সহকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের দোয়া মাহফিলে শরীক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এছাড়া এই দিনটি উপলক্ষ্যে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে এম এ খান স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে পবিত্র মক্কা শরীফে বিশেষ মোনাজাত, লন্ডনে, যুক্তরাষ্ট্রে ও মালয়েশিয়ায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মাহবুব আলী খান দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা তালপট্টি দ্বীপের দখল রক্ষা, সমুদ্র এলাকায় জলদস্যু দমন এবং সুন্দরবন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে নৌবাহিনীকে সচেষ্ট রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি একজন রাজনীতিবিদের ভূমিকা পালন করেছেন এবং একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন।

মাহবুব আলী খান ১৯৩৪ সালের ৩ নভেম্বর পুণ্যভূমি সিলেট জেলার বিরাহীমপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমেদ আলী খান প্রথম মুসলিম হিসেবে তৎকালীন ভারতে ১৯০১ সালে ব্যারিস্টার হন। তিনি নিখিল ভারত আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ও আসাম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রিও নেন। হায়দ্রাবাদ নিজামের প্রধান আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

এম এ খানের মাতা ছিলেন জোবায়দা খাতুন। অবিভক্ত বিহার, আসাম ও উড়িষ্যার জমিদার পরিবার খানবাহাদুর ওয়াসিউদ্দিন আহমেদের কন্যা। মরহুমা জোবায়দা খাতুনের দাদা ছিলেন ব্রিটিশদের থেকে ‘অর্ডার অব এমপায়ার’ খেতাবপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন এম এ খানের চাচাতো ভাই। ১৯৫৫ সালে সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই কন্যা শাহিনা খান জামান (বিন্দু) এবং ডা. জোবায়দা রহমান (ঝুনু)। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার কনিষ্ঠ জামাতা। তাদের কন্যা লন্ডনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত জায়মা রহমান এম এ খানের নাতনি। এমএ খান- সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু দম্পত্তির ছোটকন্যা ডা. জোবায়দা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিলাভ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যেও চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। লন্ডনের স্বনামধন্য লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের চার বছরের মাস্টার্স অব কার্ডিওলজিতে (এমএসসি ইন কার্ডিওলজি) ডিস্টিংশনসহ শতকরা ৮৩ ভাগ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মোট চার বছরের এই কোর্সে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউই), কমনওয়েলথভুক্ত দেশ, নাইজেরিয়া ও চীনসহ মোট ৫৫টি দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ডা. জোবায়দা রহমান সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। এমএসসি কার্ডিওলজিতে ডা. জোবায়দা রহমানই বাংলাদেশি চিকিৎসক হিসেবে প্রথম হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন।

এমজে/