সরকারি কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি রয়েছে: টিআইবি

সরকারি কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি রয়েছে: টিআইবি

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য যে জনস্বার্থে জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশযোগ্য একটি বিষয় এবং তা জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত, এ উপলব্ধি ও চর্চা অপরিহার্য।

‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ’আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০১৯ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ১০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এটি আয়োজন করা হয়।

এতে তিনি আরো বলেন, তথ্য কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সম্পৃক্ততায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘার্ষিক আইন বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট যা বাকস্বাধিনতা ও তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনাকে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে তাকে ঢেলে সাজাতে হবে।’

সরকারি, বেসরকারি ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগ ও তথ্য অধিকার আইনের দশ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এর বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইনের প্রথম দশকে বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তবে তা এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য ১০ বছর খুব বড় একটা সময় নয়।’

বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ১০০ জন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন, যেখানে ৮৯ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনযাপনে দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকে। এছাড়া তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ, তন্মধ্যে ২০ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার ধারণা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, জরিপকৃতদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন, তথ্যের ফলে দুর্নীতি কমে বলে বিশ্বাস করেন।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক আন্দোলন তেমন কার্যকরি নয় কেননা জরিপকৃতরা বিশ্বাস করেন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ। বরং তারা সামাজিক আন্দোলনের প্রতি তাদের আস্থা বেশি। তাছাড়া, তথ্য অধিকার আইনকে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয় জরিপে।

তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকান্ডে জনগণের অধিকার সচেতনতা ও অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন। একে কার্যকর করার মাধ্যমে জনগণ সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারে। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. অনন্য রায়হান, প্রতিষ্ঠাতা ও সদস্য, পরিচালনা পর্ষদ, ডি’নেট এবং টিআইবি উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

মূল প্রবন্ধের সমর্থন করে ড. অনন্য রায়হান বলেন, ভিন্নমত প্রকাশের যে স্বাধীনতা তা ভীষণভাবে সংকুচিত হয়েছে। আর সেই অবস্থার উন্নতি সম্ভব যদি তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ করা যায়। গণমাধ্যমকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বড় বড় যে দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যই জনগণ জানতে পেরেছে।’ এছাড়া তিনি তথ্য সংরক্ষণ ও এর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এতে আরো বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগে সকল অংশীদাররা নাগরিক, সরকার, তথ্য কমিশন এর সংক্রিয় ভূমিকা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর অভীষ্ট অর্জন সম্ভব। জনগণকে এই আইন ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

এমআই