চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: বিপজ্জনক ৫০ বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: বিপজ্জনক ৫০ বাঁক যেন মৃত্যুফাঁদ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অন্তত ৫০টি বিপজ্জনক বাঁক যেন রীতিমতো মৃত্যুফাঁদ। এই বাঁকগুলোর প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরছে প্রাণ।

পুলিশ বলছে, মহাসড়কের এ বিপজ্জনক বাঁকের কারণে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি প্রশিক্ষণবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, তড়িঘড়ি করে ওভারটেক, বেপরোয়া গতি, ভাঙাচোরা সড়ক ও ট্রাফিক আইন না মানার কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত এক বছরে এ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে। যদিও পুলিশের কাছে হতাহতের সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। সর্বশেষ শনিবার রাতে এ মহাসড়কের লোহাগাড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসের সামনের বাঁকে দুর্ঘটনায় দুই ভাই ও লেগুনা চালকসহ ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় শত শত অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যখন তখন এসব ছোট যান উঠে যাচ্ছে মহাসড়কে। ফলে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন মালিকরা পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব যানবাহন রাস্তায় নামাচ্ছে।

মহাসড়কের বাঁক নিয়ে পুলিশ বলছে, কর্ণফুলী সেতু থেকে চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ নদীর ব্রিজ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কে অন্তত বিপজ্জনক ৫০টি বাঁক রয়েছে।

এসব বাঁক যেন একেকটি মরণফাঁদ। একইভাবে কক্সবাজার থেকে দোহাজারী সেতু পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগছে সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা। এ ১১৫ কিলোমিটারে মধ্যে বেশি বাঁক রয়েছে চুনতি থেকে চকরিয়া পর্যন্ত। শনিবার রাতে মহাসড়কের এ অংশটিতেই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

সাম্প্রতিক সময়ে এ মহাসড়কে এটিই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। চন্দনাইশে গাছবাড়িয়া কলেজের পরের বাঁকেই নিহত হন নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিণী। তার পর থেকেই তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন গড়ে তোলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাঁক সোজা করার একটি প্রকল্প কয়েক বছর আগে গ্রহণ করা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনাও কমছে না।

একটি সূত্র বলছে, বিপজ্জনক এ বাঁকের কারণে চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ সেতু থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতেই সময় লাগে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা।

বাঁকগুলোর অন্যতম হচ্ছে- পটিয়া মইজ্জার টেক, পটিয়া-আনোয়ারা ক্রসিং, মনসার টেক, বাদামতল, গৈড়লার টেক, নিমতল দরগাহ, আমজুরহাট, পটিয়া পোস্ট অফিস, আদালত গেট মোড়, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, বাসস্টেশন, কমলমুন্সীর হাট মিলে ৩০টি পয়েন্টে এবং মহাসড়কের বাকি অংশেও একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।

জানুয়ারিতে পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক দম্পতিসহ তিনজন মারা যান। গত বছর ৩ ফেব্রুয়ারি পটিয়ার ভাইয়া দীঘির পাড় এলাকায় বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত হন একই পরিবারের তিনজনসহ ৪ জন।

আহত হন ১১ জন। গত বছরের ১৯ আগস্ট পটিয়ার আমজুর হাট মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী শ্যালক-দুলাভাই।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, মহাসড়কটি অনেক সরু। এ ছাড়া কিছু দূর অন্তর রয়েছে বিপজ্জনক সব বাঁক বা মোড়।

এমজে/