একে একে ৩০টি মৃতের দাফনেও করোনা নেগেটিভ খোরশেদের

একে একে ৩০টি মৃতের দাফনেও করোনা নেগেটিভ খোরশেদের

সারা বাংলাদেশে জেঁকে বসতে শুরু করেছে করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ টি জেলার ৫৮ টি জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। প্রতিনিয়তই দেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। আর এই কারণে বর্তমানে কোন ব্যক্তির জীবন অবসান হলে তার শেষ কাজে পোহাতে হচ্ছে অনেক ধকল। বিশেষ করে করোনার উপসর্গ কিংবা করোনা আক্রান্ত হয়ে কারোর প্রাণহানি ঘটছে তার শেষ কাজে আসতে চায় না কেউ। আর এই মানুষের দুঃখের সময় তাতেই সকলের পাশে এসে দাঁড়ালেন নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এখন পর্যন্ত একে একে ৩০টি করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন ও সৎকার করেছেন নারায়ণঞ্জের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। অনেকের মতো তারও ভেতরে আতঙ্ক ছিল দাফন করতে গিয়ে নিজেও আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন কি না মরণঘাতী করোনায়। তাই পরীক্ষা করেছিলেন এই জনপ্রতিনিধি। তবে শুক্রবার তার ফলাফল পেয়েছেন যাতে নেগেটিভ এসেছে। একথা কাউন্সিলর খোরশেদ নিশ্চিত করেছেন।

সবাই যখন করোনা আতঙ্কে তখন কিছু মানুষ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিনে দিনরাত কাজ করছেন। আবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরাদেহ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে এই আতঙ্কে স্বজনরাও কাছে আসছেন না এমন ঘটনাও ঘটেছে। এরমধ্যে নারায়ণঞ্জের একজন কাউন্সিলর ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন কাউন্সিলর খোরশেদ। বলেছেন, করোনার হটস্পটখ্যাত নারায়ণঞ্জে যদি কেউ করোনায় মারা যাবে তার দাফন কাফন নিজেই করবেন।

ইতিমধ্যে ৩০ জনের মতো করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মুসলমান ও হিন্দুর দাফন এবং সৎকার করেছেন কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তার নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল যেখানেই নারায়ণঞ্জের কেউ করোনা বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের দাফন বা সৎকার করছেন।

দলমত নির্বিশেষে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে খোরশেদের উদ্যোগ। কারণ নারায়ণগঞ্জে করোনার সংক্রমণ শুরুর পরেই এর বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ শুরু করেন তিনি। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত কেউ মারা গেলে কয়েক ঘণ্টা পর আর তা থেকে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। কারণ ভাইরাসগুলো মরে যায়।

কাউন্সিলর খোরশেদ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে দুই দফা করোনার পরীক্ষা করেছেন। সবশেষ বুধবার টেস্ট করতে দিয়েছিলেন যার রেজাল্ট শুক্রবার পেয়েছেন। দুটি রিপোর্টেই তার নেগেটিভ এসেছে।

খোরশেদ বলেন, ’শুরু থেকেই আমি করোনা নিয়ে সক্রিয় ছিলাম ও এখনো আছি। প্রচুর রোগীর বাসায় গিয়েছি। তার মধ্যে অনেকে ছিল যাদের মধ্যে উপসর্গ ছিল, আবার কারো মৃত্যুর পর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। অনেকের পরিবারের লোকজনও ভয়ে মৃতদেহ ধরেনি। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি যথেষ্ট প্রটোকল পোশাক পরিহিত হয়েই কাজগুলো করতে। কিন্তু তার পরেও ঝুঁকি ছিল। সে কারণেই নারায়ণগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের নিজ উদ্যোগেই আমার নমুনা সংগ্রহ করেছিল। দুটি রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি মনে করছি এ রিপোর্ট আমার কাজের গতি আরো বাড়াবে।’খবর ঢাকা টাইমস।

কাউন্সিলর বলেন, ’আমি প্রতিদিন নিয়মিত চার থেকে পাঁচবার গরম পানিতে গারগিল করতাম। নিয়ম করে প্রতিদিন একাধিকবার গরম পানির ভাপ নিয়েছি। সকালে একবার এক গ্লাস গরম পানির সাথে আধা চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে গারগিল করেছি। বিকালে আরেকবার করেছি। একইভাবে সকালে একবার এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গারগিল করেছি, রাতেও করেছি। দিনে রাতে একাধিকবার গরম পানির ভাপ নিয়েছি। ভিনেগার একটি এ্যাসিড, এতে জীবাণুর মৃত্যু ঘটে। একইভাবে গরম পানিতে লবণও কার্যকরী।’

শনিবার বিকালেও করোনায় আক্রান্ত রোগীর মরদেহ দাফন করেন খোরশেদ এবং তার স্বেচ্ছাসেবকা। ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আজ ১ রমজান। আমাদের ৩০ তম দাফন। আজ একজন যার কোভিড-১৯ পজিটিভ বাদ জোহর তার দাফন সম্পন্ন করলাম। এদিকে প্রতিদিনই বাংলাদেশে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। দেশে এখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি। যা বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে সত্যিই অনেক আশঙ্কার একটি ব্যাপার। সারাদেশ লকডাউন করা থাকলেও কোনকিছুই যেন কাজে দিচ্ছে না।

এমজে/