১০ গ্রামের লকডাউন প্রত্যাহার

আনসারীর জানাযায় অংশ নেয়া কয়েক লাখ লোকের কারও শরীরে করোনার উপর্সগ নেই

আনসারীর জানাযায় অংশ নেয়া কয়েক লাখ লোকের কারও শরীরে করোনার উপর্সগ নেই

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে লকডাউন উপেক্ষা করে খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে আমির, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজার নামাজে কয়েক লাখ লোক অংশগ্রহণ করলেও তাদের শরীরের করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। আপাতত গ্রামগুলো ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাভাবিক মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে অবরুদ্ধ থাকা ১০ গ্রামের কোয়ারেন্টিন শেষ হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ হচ্ছে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, অবরুদ্ধ ১০টি গ্রামে গত ১৪ দিনে কোনো উপসর্গ না পাওয়ায় কোনো ব্যক্তি শনাক্ত হয় নাই। গ্রামগুলো আপাতত ঝুঁকিমুক্ত ও স্বাভাবিক মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ই এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদরাসায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে মরহুমের জানাজার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে মৌখিক ভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা হয়েছিলো। কিন্তু লকডাউন উপেক্ষা করে আইন ভেঙ্গে জানাযায় লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটে। মাদরাসার প্রান্তর ছাড়িয়ে জানাজার সারি দীর্ঘ হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। বিভিন্ন স্থান থেকে অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে মুসল্লিরা আসেন। জেলা শহর থেকে হেঁটেও অনেকে জানাজায় অংশ নেন। রাস্তায় জনসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে জেলার বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা চৌকি থাকলেও সেসব পেরিয়ে মানুষজন জানাজায় অংশ নেন।

এ অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ এ আয়োজন ঠেকাতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ছিল নীরব দর্শক। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নয়, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও দলে দলে মানুষ এ জানাজায় অংশ নেয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি না দেখার বান করে এড়িয়ে গেছেন। অথচ এমন একজন প্রখ্যাত আলেমের মৃত্যুতে তার বক্ত, শুভাকাঙ্খীরা জানাযায় উপস্থিত হতে পারে সেই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সচেতন হওয়া দরকার ছিলো। জেলার গোয়েন্দা সংস্থার লোক জনও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিশিষ্টজনরা এ ঘটনাকে খুবই উদ্বেগজনক উল্লেখ করে জনসমাগম ঠেকাতে প্রশাসনের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছিলো।

অথচ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে বারবার নিষেধ করা হয়েছিলো। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করেনি কেউ। এ ঘটনায় চরম দায়িত্বহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছিলো।

জানাযায় লাখো লোকের সমাগমের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসলে দেশের সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এ ঘটনার পর থেকেই জেলা প্রশাসন মাদ্রাসার আশপাশের ১০টি গ্রামকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। সেই সঙ্গে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করার নির্দেশ দেন।

১৭ই এপ্রিল শুক্রবার বিকালে মার্কাস পাড়ায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মাওলানা জোবায়ের। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশের আলেম উলামাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। জুবায়ের আহমদ আনসারীর বাড়ি জেলার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের আলিয়ারা গ্রামে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই এলাকা থেকে ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন।