নতুন করে কারখানা খোলার পর পাওয়া গেছে ৯ জন

পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে

পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে

তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে নতুন করে কারখানা চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত পোশাক কারখানার ৯ জন শ্রমিকের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ২৫ মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৯ জন শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন।

গত ২৫ মার্চ কারখানা ছুটি ঘোষণার করায় এলাকায় ফিরে যাওয়ার পর অনেক শ্রমিকের করোনা ধরা পড়েছে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতারা জানান, করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই সম্প্রতি কারখানা চালু করা হয়েছে। কারখানা এলাকায় অবস্থানরত স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক নিয়ে, স্বল্প পরিসরে কারখানা চালানো এবং ধাপে ধাপে কারখানা খোলার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও অনেক কারখানা মালিকই তা মানেননি।

অন্যদিকে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকরা চাকরি রক্ষার জন্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে ফিরতে শুরু করায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকরা সবাই যে কারখানায় আক্রান্ত হয়েছেন এটি বলা যাবে না। কেননা অনেকেই নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়ার পরও আক্রান্ত হতে পারেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই নিজেদের মতো করে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৩৯ শ্রমিকের মধ্যে এই এলাকার কারখানায় কাজ করা শ্রমিক আছেন ২৬ জন। এ ছাড়া আশুলিয়ার সাতজন ও গাজীপুরের ছয়জন শ্রমিক রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) গতকাল জারি করা এক নির্দেশনায় ঢাকার বাইরে থাকা শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলমুখী হওয়ার পথ আরো সহজ হলো। শিল্পাঞ্চলের বাইরে থাকা শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলমুখী না হতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমনকি শ্রম মন্ত্রণালয় বলে এলেও গতকাল ওই নির্দেশনায় বলা হয়, শ্রমিকরা আসতে হলে কারখানার পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখাতে হবে। যদিও এতে শ্রমিকদের ঢাকা আসতে নিরুৎসাহিত করার কথাও বলা হয়েছে।

কারখানা খোলার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা না মানার কারণে এ সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘যথাযথ প্রস্তুতি ও স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া ২৬ এপ্রিল অধিকাংশ কারখানাই খুলেছে। এর ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ কী হারে বাড়ে তা দেখার জন্য আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।’

শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা খোলার এবং শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও শ্রমিকদের মধ্যে এখনো যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। এর ফলে এরই মধ্যে পোশাককর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ রোধে উদ্যোক্তারা ও শিল্প পুলিশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কারখানার শ্রমিকদের আরো বেশি সচেতন করতে কর্তৃপক্ষকে সচেতনতা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কারখানায় আসা-যাওয়ার সময়। এ জন্য কারখানার মালিকদেরই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আক্রান্ত শ্রমিক ও কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেটা জানাতে পারেনি। তবে শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকদের কেউ হাসপাতালে, কেউ কেউ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।