কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সের বিরুদ্ধে

কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সের বিরুদ্ধে

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দেশের ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্তের পাশাপাশি চলছে ছাঁটাই আতঙ্ক।

অভিযোগ উঠেছে লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স থেকে কর্মকর্তাদের ডেকে স্বেচ্ছা অবসরে যেতে বাধ্য করছে কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে এক দিকে তারা অফিস করছেন, অপর দিকে চলছে বেতন-ভাতা কমানোর পাশাপাশি ছাঁটাই আতঙ্ক।

এক দিকে করোনাভাইরাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অপর দিকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। প্রতিষ্ঠানের দুর্দিনে তারা সাথে থাকলেও তাদের দুর্দিনে প্রতিষ্ঠান তাদেরকে ছুড়ে ফেলছে, যা অমানবিক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল এ বিষয়ে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে। এই দুর্দিনে চাকরি থেকে বাদ দেয়া কোনো ক্রমেই ঠিক নয়। কেউ যদি এ রকম কোনো কিছু করে তাহলে চরম অন্যায় কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নানা রকম ঝুঁকি নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য এত দিন কাজ করেছেন। ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের ১২ বছরে সব জায়গায়ই সুনামের সাথে কাজ করেছেন। অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু এই দুর্দিনে তাকে প্রধান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি মনে করেন এটা অমানবিক। তিনি এই দুর্দিনে কোথায় যাবেন, কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।

ওই কর্মকর্তার মতে আরো অনেককেই প্রধান কার্যালয়ে ডেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার মধ্যে মানুষ যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, তখন তাদেরকে ডেকে নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসর নিতে বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ১৫ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তিনি এখন কোথায় যাবেন, কী করবেন এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তিনি মনে করেন, আমরা যেমন দুর্দিনে প্রতিষ্ঠানের সাথে ছিলাম এখন আমাদের এই দুর্দিনে বেতন কমিয়ে দিয়ে রাখলেও আমরা অনেকটা কোনো মতে চলতে পারতাম। প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক হলে তখন আবার বেতন যথানিয়মে দিত। এতে বেশির ভাগ কর্মকর্তারই কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু তানা না করে এই দুর্দিনে তাদেরকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, কোথায় গেল আজ মানবতা।

অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে প্রধান কার্যালয় থেকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু তিনি ভয়ে প্রধান কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। বলা হচ্ছে, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে চাকরিচ্যুত করা হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন কী করবেন তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।

এ বিষয়ে লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা শাহরিয়ার গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যাদের পারফরম্যান্স ভালো না তাদেরকে আমরা চাকরি ছাড়তে বলছি। এটা করোনার কারণে নয়। প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আমরা এ কাজ করে থাকি। এ বছর করোনার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। এ জন্য জুন মাসে আমরা ননপারফরমারদের চাকরি ছাড়তে বলছি।

লংকা-বাংলার মতো আরো অনেক প্রতিষ্ঠানেই ছাঁটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনার মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে গেছে। ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে ব্যয় কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমিয়ে দিয়েছে। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) থেকে সব ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী দেড় বছরের জন্য ৪০ হাজার টাকার ওপরে মোট বেতনের ১৫ শতাংশ বেতন কাটার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেন্টিভ বোনাস দেয়া হবে না। নতুন কোনো নিয়োগ করা হবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রমোশনাল কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন পত্রিকায় বা টেলিভিশনে প্রচার করা যাবে না। এমন সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ব্যাংকারদের ওপর চাপিয়ে দেয়ায় সর্বত্রই ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তবে এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের এমডি মো: আব্দুল হালিম চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএবি কিছু পরামর্শ দিয়েছে তাদের বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। তবে তিনি মনে করেন, ব্যাংকের এখনো এমন কিছুই হয়নি যে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমিয়ে দিতে হবে। ব্যাংকাররা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অফিস করছেন। এই মুহূর্তে বেতন কমানোর কথা বললে তারা কাজের মনোবল হারিয়ে ফেলবেন। এ কারণে তিনি অন্যান্য ব্যয় কমানোর পক্ষে। বেতন-ভাতা, প্রচার-প্রচারণার ব্যয় কমানোর পক্ষে নন।