সৈকতে ভেসে আসা সব বর্জ্য দেশি

সৈকতে ভেসে আসা সব বর্জ্য দেশি

সমুদ্রে চলছে বিরামহীন দূষণ। এ দূষণের ভয়াবহতায় ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য।

মারা যাচ্ছে কচ্ছপসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী। তাদের আহত শরীর কিংবা মরদেহ ভেসে উঠেছে কক্সবাজার সৈকত বালুচরে।

এ অবস্থা গভীর উদ্বেগজনক এবং বেদনাবহ হলেও এনিয়ে স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন কিংবা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির মধ্যে দেখা যায়নি কোনো মানবিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা। পানির ঢেউয়ে সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা আহত প্রাণীগুলো উদ্ধার করা বা পুনরায় সাগরে ফিরিয়ে দেওয়ার এমন মানবিক কাজগুলো করতে দেখা যায়নি স্থানীয়দের। সাগরের জোয়ারে সৈকতের বর্জ্য থেকে নিজেরা মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহে ছিলেন ব্যস্ত।

সম্প্রতি এ অবস্থা জেনে সরেজমিনে কক্সবাজার সৈকতে যান বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, সম্প্রতি পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে, বিদেশি একটা জাহাজ কয়েক হাজার টন বর্জ্য আমাদের দেশের সমুদ্রসীমানায় ফেলেছে। সেই বর্জ্য ও মাছ ধরার জালের সঙ্গে সামুদ্রিক সাপ আর কচ্ছপ উঠে আসে সৈকতে। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে- সেটা হলো এই সংবাদটা নিছক ভুয়া এবং বানোয়াট। কারণ আমি গত সাতদিন ধরে এগুলো নিয়ে কাজ করছি।

‘সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা শতকরা ৯০ শতাংশ প্রোডাক্ট হচ্ছে আমাদের দেশের। বাটার সেন্ডেল, সানলাইটের গ্যাস লাইট থেকে শুরু করে সব হচ্ছে আমাদের দেশের জিনিসপত্র। আর বাকি যে শতকরা ১০ শতাংশ আছে সেগুলো হলো বার্মিজ এবং থাইল্যান্ডের জিনিস। এই জিনিসগুলো তো কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেটে কিনতে পাওয়া যায়। ’

তিনি বলেন, আমার ধারণা সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা সবগুলো পণ্যই বাংলাদেশি এবং কক্সবাজার শহরের যে বর্জ্য সমুদ্র ফেলে দেওয়া হয় তা। সেগুলোই আবার ভেসে চলে আসছে সৈকতে। এখানে কক্সবাজারে এতগুলো ফাইভস্টার হোটেল রয়েছে। হাজার হাজার শুধু মদের বোতল বর্জ্য আকারে কোথায় যায়।

‘কচ্ছপ উদ্ধার’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি প্রথম দিন নিজে আমার ফার্মের কর্মচারীদের নিয়ে ময়লাগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা আহত ২১টা সামুদ্রিক কাছিম উদ্ধার করে পুনরায় সমুদ্রে ফেরত পাঠিয়েছি। আমরা যেগুলো পেয়েছি তার মধ্যে দ ‘টি জালে আটকা ছিল। সে দুইটাকে আমি জাল কেটে বের করেছি। আর অবশিষ্ট ১৯টি কাছিম বিচে পড়ে ছিল। কোনোটা উপুড় হয়ে পড়েছিল, কোনোটা আহত হয়ে পড়েছিল; কোনোটার সামনের ডান-পা নেই; কোনোটার সামনের বাম-পা বিচ্ছিন্ন; কোনোটার আবার পেছনের একটা পা নেই।

‘এই কচ্ছপগুলোকে যখন আমরা সাগরে ফেরতে দিই এর মধ্যে ৬ থেকে ৮টা কচ্ছপ আবার পানিতে ভেসে সৈকতে এসেছে। কারণ সাঁতার কাটার মতো শারীরিক ক্ষমতা এদের নেই। কারণ ওর সামনের হাত-পাই যদি না থাকে তাহলে কী দিয়ে সাঁতার কাটবে? এভাবে ওরা পানির ঢেউয়ে আবার ভেসে এসেছে। ’

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলো কথা উল্লেখ করে আদনান বলেন, শত শত স্থানীয় মানুষ ওর ভেতর থেকে মদের বোতল, দামি জিনিসপত্র কুড়াতেই ব্যস্ত। তাদের সামনে যে কচ্ছপগুলো এভাবে উল্টে পড়ে আছে বা তাদের পায়ের সামনেও পড়ে আছে; একটা মানুষের একবারও মনে হয়নি যে, কচ্ছপগুলোকে নিয়ে একটু পানিতে ছেড়ে দেই। ’

তবে কক্সবাজারের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্যা নেচার’ নাম; ওরা বেশ কিছু কচ্ছপ উদ্ধার করেছে। ওরা আলাদা সাইডে করেছে; আমি আলাদা সাইডে করেছি; আমার থেকে প্রায় ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের সৈকতে কচ্ছপগুলোকে উদ্ধার করে পুনরায় সমুদ্রে ফেরত পাঠিয়েছেন বলে জানান এ বন্যপ্রাণী গবেষক।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ সেন বাঞ্চু সাগরে বর্জ্য ভেসে আসার কারণ সম্পর্কে বলেন, বর্জ্য সাগরের নয়; মনুষ্য সৃষ্টি। জাহাজ-নৌকা থেকে অহরহ সাগরে বর্জ্য ফেলা হয়। এছাড়াও পাহাড়ি ঢল নামলে শহরের বর্জ্য ভেসে সমুদ্র গিয়ে পড়াসহ কিছু কারণ রয়েছে। জোয়ার এলে সেই অতিরিক্ত বর্জ্যগুলো বিচে ভেসে আসে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, জেলেদের সাগরে ফেলে দেওয়া কারেন্ট জালসহ অন্য নেটে জড়িয়ে সাগরের কচ্ছপগুলোর এই অবস্থা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেবো। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।

এমজে/