বছর ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

বছর ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বা বিনিয়োগ কমেই চলেছে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৯-২০) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৩৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বা ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা গেছে, অবাধ বিনিয়োগ ঠেকাতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে গত বছরের প্রতিমাসেই কমে আসছিল সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। বছর শেষে এর বিক্রি গিয়ে ঠেকেছে তলানীতে। এছাড়া পুরো বছরজুড়েই সঞ্চয় বিমুখ প্রবণতা দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাই গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমেছে ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছিল।
ওই বিক্রিতে লাগাম টানতে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে বেশ কিছু শর্ত ও বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। ফলে গত বছর কমতির দিকেই ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সম্প্রতি করোনা মাহামারিতে সঞ্চয়তো দূরের কথা উল্টো সঞ্চয় তুলে নিচ্ছেন অনেক গ্রাহক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত মার্চ থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর স্থবির হতে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এখনো গতিহারা অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে মানুষকে সঞ্চয় করার চাইতে বরং সঞ্চয় তুলে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে। এর ফলে সামনের মাসগুলোতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চাইতে তুলে নেয়ার পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এবং অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি না আসলে আগামী দিনে সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে নেয়ার হার আরো বাড়বে।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের (২০১৯-২০) মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নিলেও বিক্রি কমতে থাকায় পরবর্তীকালে তা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ধরা হয়।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে একজন ব্যক্তি একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা, যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।

দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই।

এছাড়া এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, প্রথম দিকে সরকারের কড়াকড়ি পরে করোনায় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন সঞ্চয়কারীরা। অনেকে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউবা আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় বাসা নিচ্ছেন। এভাবে যেখানে বাসা ছেড়ে দিতে হচ্ছে সেখানে সঞ্চয়ের তো কোনো সুযোগ নেই। এসব কারণে অস্বাভাবিক হারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।

ব্যাংকাররা বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। সঞ্চয় করবে কীভাবে। করোনায় মধ্যবিত্ত প্রায় শেষ। নিম্নবিত্ত তো করোনার প্রথম ধাক্কায় শেষ হয়ে গেছে। রাস্তায় বের হলে শুধু টু-লেট আর টু-লেট। অর্থাৎ বাসা ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞপ্তি। এর অর্থ মানুষ বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রধানত দুই কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। আইনগত কড়াকড়ি এবং মহামারি করোনার সংকট। বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আয়করের হার বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আরো কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ায় সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সহজে সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না। করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত অনেকে সঞ্চয় ভাঙছেন।

এমজে/