মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে: তারেক রহমান

মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে: তারেক রহমান

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কাগজে-কলমে এখন দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা রয়েছে বটে, কিন্তু ‘মানুষের স্বাধীনতা’ নেই, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার অধিকার নেই, এখন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির উদ্যোগে গঠিত কমিটির প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে শনিবার (২১ নভেম্বর) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশে ক্রমাগত মানবাধিকার হরণের চিত্র উপস্থাপন করে তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, কারা এখন স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদের গুম করছে,খুন করছে ? গণতন্ত্রকামী মানুষদের অপহরণ করছে? গুম কিংবা অপহৃত হওয়া মানুষগুলোকে কখনো কখনো কেন সীমান্তের ওপারে পাওয়া যায়? কেন সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়? কেন স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার সীমান্তে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে? কেন স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদার পক্ষে কথা বললে ‘আবরার’দেরকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় ? কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীন বাংলাদেশে ‘আবরার’দেরকে খুন করার মতো জানোয়ার সৃষ্টি হয়েছে? কেন প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা? কেন, কি কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেনা? কেন পরিচয় দেয়ার পরও স্বাধীন বাংলাদেশে সেনা অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয়? প্রকাশ্যে রাজপথে লাঞ্চিত করা হয়? কেন স্বাধীন বাংলাদেশে সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছেনা?

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতি হিসেবে হয়তো অনেক অপ্রাপ্তি রয়েছে তবে আমাদের চরম এবং পরম প্রাপ্তি হচ্ছে, লাখো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মালিক হয়েছি। এই প্রাপ্তির সঙ্গে আর কোনো অপ্রাপ্তি কিংবা অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলেনা।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররাফ হোসেন।

বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অনেকে।

তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই ঊষালঘ্নে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির কাছে, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির কাছে একটি বড় জিজ্ঞাসা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জনগণ যে রাষ্ট্রটির মালিক হয়েছিল বর্তমানে সত্যিকার অর্থে জনগণের কাছে কি সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আছে নাকি জনগণ এখন নিজ দেশেই পরাধীন ?

তিনি বলেন, সাম্য-মানবিক মর্যাদা এবং ন্যয় বিচার এই মূলমন্ত্রে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। মানুষের আকাংখা ছিল, স্বপ্ন ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে মানুষের স্বাধীনতা, প্রতিষ্ঠিত হবে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার অধিকার, প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্র, স্বাধীন দেশে মানুষের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকবে, অথচ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে এখন জনগণ দেখছে সম্পূর্ন উল্টো চিত্র।

দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপির বিকল্প নেই উল্লেখ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটি এখন প্রমাণিত সত্য যে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিকল্প নেই। এই সত্যটি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের শাসনামল এবং বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

তারেক রহমান আরো বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে একদলীয় কুখ্যাত বাকশাল চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ সবগুলো রাজনৈতিক দল অপরদিকে জিয়াউর রহমান সবগুলো রাজনৈতিক দলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে

সবাইকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সবাইকে বাঙালি বানাতে গিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে অন্য ভাষা ও গোষ্ঠীর মানুষের মনে অবিশ্বাস ও বিরোধের জন্ম দেয়া হয়েছিল অপরদিকে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে’র দর্শন’।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্যারালাল হিসেবে খুনি রক্ষীবাহিনীর জন্ম দেয়া হয়েছিলো অপরদিকে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীকে একটি সম্পূর্ণ পেশাদার এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি এবং বেপরোয়া লুটপাটে, বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অপরদিকে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল একটি কার্যকর, কল্যাণ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি নয় বরং বাংলাদেশ বিদেশে রপ্তানিও করতে পারে, জিয়াউর রহমানই এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষকের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বিদেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানি। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সেটিও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরই উদ্যোগেই হয়েছিল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জিয়াউর রহমানের সাফল্য এখানেই শেষ নয়, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি প্রণয়ন,

পাহাড়ি ঢল কিংবা অতিবৃষ্টিতে দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ অথবা খরা কিংবা অনাবৃষ্টিতে পানি ব্যবস্থাপনায় ‘খাল খনন’ কর্মসূচি ছিল জিয়াউর রহমানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য জীবনের নানাক্ষেত্রে দেশে- বিদেশে যারা অনন্য, এমন গুণী ও সফল এমন মানুষদের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানিত দু’টি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এর একটি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অপরটি ‘একুশে পদক’ । এই দু’টি পুরস্কারই প্রবর্তন করেছিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এমন অগণিত সাফল্য মানুষের হৃদয়ে জিয়াউর রহমানকে অমর করে রেখেছে।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, প্রতিবারই দেশ এবং জনগণের কল্যানে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।

জনগণের রায়ে বিএনপি কয়েকবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। গম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার ‘এশিয়ার ইমারজিং টাইগার’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ৯৬ এর আওয়ামী লিগ সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়

বিপরীতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদশকে দুর্নীতির কালিমা থেকে বের করে আনে।

বিভিন্ন মেয়াদে খালেদা জির সরকারের আমলে নেয়া কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু হয়েছিল, পৃথক তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু হয়েছিল। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী তাই নারীদেরকে শিক্ষায় এগিয়ে নিতে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার-ই-প্রথমবারের মতো মেয়েদেরকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়। খালেদা জিয়া সরকারের আমলে, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, ১৯৯২ সালে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়, ১৯৯৩ সালে ”খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি” চালু হয়, ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিএনপির সাফল্যের উদাহরণ ভুরি ভুরি কারণ বিএনপি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী, বলেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, সবার কাছেই একটি বিষয় স্পষ্ট থাকা দরকার, সেটি হলো, জিয়াউর রহমান দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়ে, সকল রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে, দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন তাহলে স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লিগ সরকার কেন ব্যর্থ হলো? কেন স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারকে বিরোধী দল ও মতের ৩০/৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করতে হলো? কেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করতে হলো ?

তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে যারা বলছেন, স্বাধীনতার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি, তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রায় চার বছরের শাসনামল আর জিয়াউর রহমানের শাসনামলের মধ্যে সময়ের ব্যাবধান বেশি নয় মাত্র কয়েকমাসের, তাহলে জিয়াউর রহমান সফল হলেন কেমন করে?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে গঠিত কমিটির প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ সরকারি মালিকানাধীন অধুনালুপ্ত ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

বক্তব্যে তারেক রহমান, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের রহমানের লেখা নিবন্ধটির কয়েকটি লাইন উল্লেখ করেন। নিবন্ধটির শেষ প্যারায় জিয়াউর রহমান লিখেন, ‘সময় ছিল অতি মূল্যবান। আমি ব্যাটালিয়নের অফিসার, জেসিও আর জওয়ানদের ডাকলাম। তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলাম, তাদের নির্দেশ দিলাম সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে। জিয়াউর রহমান আরো লিখেন, ” তখন রাত ২টা বেজে ১৫ মিনিট। ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সাল। রক্তের আঁখরে বাঙালির হৃদয়ে লেখা একটি দিন। বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন স্মরণ রাখবে এই দিনটিকে। স্মরণ রাখবে, ভালোবাসায়। এই দিনটিকে তারা কোনো দিন ভুলবে না। কোনো-দি-ন-না “।

জিয়াউর রহমানের রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার প্রেক্ষাপট, দীর্ঘদিন থেকেই তিনি কিভাবে নিজের মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন লালন করেছিলেন, তিনি কেন ও কারণে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণে বিরক্ত ও বিক্ষুব্ধ ছিলেন, পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য কিভাবে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণ মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন, ‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধটিতে এটি স্পষ্ট হয়েছে, বলেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, নিবন্ধটিতে দেখা যায় জিয়াউর রহমান শুধু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ফলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদারবাহিনী স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলা চালালে পাল্টা জবাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে জিয়াউর রহমানের সময় লাগেনি।

তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ নিবন্ধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য দলিল। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে গঠিত’ এই বিশেষ কমিটির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ‘একটি জাতির জন্ম’ নিবন্ধটি একটি গাইড লাইন হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।

বিএনপি মনে করে, ১৯৫৭ সালের ‘কাগমারী সম্মেলনে’ মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারনের মাধ্যমে মানুষের মনে স্বাধীনতার যে বীজ বপন করেছিলেন তারই চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৭১, বলেন তারেক রহমান।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক অবদান নয় বরং গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে এম ফজুলল হক, মজলুম জননেতা ভাসানী, প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী, এদের কোনো একজনকে বাদ দিয়েও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হতে পারেনা। এভাবে আরো অনেকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সুতরাং ইতিহাস বিকৃতি, অতিরঞ্জন, মিথ্যাচার কিংবা অপপ্রচারের দরকার নেই। সময়ের কষ্টিপাথরে ইতিহাসই নির্ধারণ করবে কার কী অবদান, কতটা অবদান।

দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী তথা দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত থাকা আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদেরকে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতা ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পরাজিত করেছিল। ৭৫ সালের নভেম্বরের পরাজিত সেই অপশক্তি মহাজোটের নামে একজোট হয়ে আবারো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছে।

এই অপশক্তির উদ্দেশ্য, স্রেফ লেন্দুপ দর্জির মতো ক্ষমতার মসনদে বসে বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখা, এই অপশক্তির টার্গেট দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখা। সে কারণেই ৭৫ সালের নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে

আর বিএনপির বিরুদ্ধে চলছে অব্যাহত ষড়যন্ত্র, মন্তব্য করেন তারেক রহমান

তারেক রহমান বলেন, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ৭৫ এর পরাজিত অপশক্তির ইন্ধনে ২০০৪ সালে ‘২১ আগস্ট’ এর ঘটনা ঘটে। ২১ আগস্ট’ এবং কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। একটি ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই পরিকল্পতিভাবে ‘২১ আগষ্টের ঘটনা’ ঘটানো হয়েছিলো। ৭৫ সালের নভেম্বরে যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০০৭ সালের কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেনে’র মাধ্যমে তারা সফল হয়। ২১ আগষ্ট আর ‘ওয়ান ইলেভেনের’ নামে ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ক্ষমতা দখল করেই ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেনা হত্যাযজ্ঞটি ছিল ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির প্রতিশোধেরই অংশ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং সেনাবাহিনী শক্তিশালী থাকলে ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবেনা। তাই ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তিকে আবারো পরাজিত করতে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ৭ ই নভেম্বরের চেতনায় ‘দেশ বাঁচাও-মানুষ বাঁচাও’ শ্লোগানে ক্ষমতাসীন অপশক্তিকে পরাজিত করে হাসিনার কবল থেকে বাংলাদেশ উদ্ধার করে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠাই হোক বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর অঙ্গিকার।