ভাগ্যবিড়ম্বিত আরমানের মুক্তি মিলছে অবশেষে

ভাগ্যবিড়ম্বিত আরমানের মুক্তি মিলছে অবশেষে

অবশেষে আরমানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি পুলিশের আইজি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের। আর সংশ্লিষ্ট চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার, যাদের কারণে ভাগ্যবিড়ম্বিত ৩৭ বছর বয়সী যুবক আরমান। সেই আরমান, যাকে মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ; আদালতকে জানিয়েছিল, সে-ই শাহাবুদ্দিন। অতঃপর সেই থেকে প্রায় চার বছর ধরে জেলে নিরীহ এ বেনারশি কারিগর।

রাজধানীর পল্লবীর বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা আরমানকে নিয়ে গত বছরের ১৮ এপ্রিল ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে দৈনিক আমাদের সময়ে

একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জারি করা রুল যথাযথ উল্লেখ করে গতকাল বৃহস্পতিবার আরমানের আটকাদেশ অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে অবিলম্বে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম রাসেল চৌধুরী।

রায়ের বরাত দিয়ে ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, আরমানের মুক্তির পাশাপাশি পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্দেশ প্রতিপালনের হলফনামা দাখিল করতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া আরমানকে গ্রেপ্তার এবং তার কারাভোগের ঘটনায় চার পুলিশ কর্মকর্তার দায় নিরূপণ করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজিকে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কমিটিকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, তদন্তে যদি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায় থেকে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে। ওই চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- পল্লবী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির, এসআই মো. রাসেল (বর্তমানে সিআইডিতে), ডিবি পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম (বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে) এবং ডিএমপির আদালত পরিদর্শক নজরুল ইসলাম। চলমান দায়িত্ব থেকে তাদের অব্যাহতি তথা ‘ক্লোজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তদন্ত চলাকালীন অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যেন তাদের নিয়োজিত রাখা হয়, সেই আদেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রায় ঘোষণাকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও প্রতিবেদকের অকুণ্ঠ প্রশংসা করে হাইকোর্ট বলেন, সাংবাদিকরা যদি এভাবে কাজ করেন, তা হলে সমাজে দুর্নীতিবাজ ও অন্যায়কারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিবেদককে অভিনন্দন জানিয়ে হাইকোর্ট যোগ করেন, সাংবাদিকতা হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং সমাজের দর্পণ।

অপরাধী না হয়েও পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জালিয়াতির ৩৩ মামলার আসামি হয়ে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। বিস্ময়কর কা- গণমাধ্যমের কল্যাণে তৎকালে ছিল মানুষের মুখে মুখে। এর রেশ তখনো কাটেনি। এর মধ্যেই দৈনিক আমাদের সময়ে উঠে আসে জাহালমের মতোই ভাগ্যবিড়ম্বিত আরমানের কথা ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।

কারাবন্দি আরমানের মা বানুর করা এক রিট আবদেনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চের জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর গতকাল বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হলো।