খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি

অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসায় সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই দাবি জানান।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। ওই সভায় আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে যেসব প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা আজ সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) অনেক অসুস্থ। তাঁর সুচিকিৎসা প্রয়োজন, যে চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমন কি যে হাসপাতালে তিনি ছিলেন সেখানেও সম্ভব হয় নাই। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তাঁর বাইরে যাওয়ার হয়তো দরকার হবে। এই ব্যাপারে সরকারের একটা নিষেধাজ্ঞা আছে, আপনারা জানেন।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দাবি জানাব, এই ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা সেটা প্রত্যাহার করা হোক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক যেন তিনি তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান তিনি যেতে পারেন।’

সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এ নেতা বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। কারণ এদেশের ইতিহাস বলে যে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থায়ও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, এই অযৌক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যে, কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য যেতে চান। এবং যেটাই প্রয়োজন হবে সেটা যাতে বিঘ্নিত না হয় সরকারের উচিত সেটা নিশ্চিত করা।’

সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। এটা রাজনৈতিক বিষয় না, এটা তাঁর চিকিৎসার বিষয়।’

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদের শেষ প্রান্তে বিএনপির চাওয়া কী—জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার আর কি। আমরা তো বরাবর, বারবার বলেছি, আমরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি তাঁকে সাজাই দেওয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে। আপনি যেটা বললেন যে, যারা অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত তাদেরও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কেন দেওয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ। যদি সরকার তাঁর প্রতি যে আচরণ করছে যেটা প্রতিপক্ষের না, শত্রুর আচরণ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার সবার সরকার হওয়া উচিত। যেটা প্রমাণ করার জন্য হলেও অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে নিশঃর্ত মুক্তি দেওয়া এবং তিনি যাতে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন, সুচিকিৎসা নিতে পারেন এবং নাগরিক হিসেবে তাঁর যে অধিকার সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।’

খালেদা জিয়া বর্তমানে কেমন আছে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই ব্যাপারে তাঁর যারা চিকিৎসক টিম এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জানছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা তো তাঁর সঙ্গে দেখাই করতে পারি না। আমরা আপনাদের মতো যতটুকু জানি, তিনি অনেক অসুস্থ। তাঁর সুচিকিৎসা প্রয়োজন।’

‘খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যত্যয় হলে বোঝা যাবে সরকার তাঁর সুচিকিৎসা চায় না’ মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একজন অসুস্থ মানুষ সুচিকিৎসা না পেলে যেটা হতে পারে সেটা সরকারের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। জনগণ সেটা বোঝে।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে নিয়োগ করায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় যে, একটি সাংবিধানিক পদের অধিকারীকে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা এবং নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয়করণের অপচেষ্টা ও একটি অত্যন্ত মন্দ দৃষ্টান্ত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের ‍উচিত হয় দলীয় পদ কিংবা অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপকমিটি থেকে অবিলম্বে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাদ দেওয়া।