বইমেলা চলবে নির্ধারিত সময় পর্যন্তই

বইমেলা চলবে নির্ধারিত সময় পর্যন্তই

একুশে বইমেলায় বেচাকেনার খরা কাটছে না। লোকজনের উপস্থিতিও কমে এসেছে। তবে মেলা নির্ধারিত সময় ১৪ এপ্রিল পর্যন্তই চলবে বলে বাংলা একাডেমির পর্যালোচনা সভায় জানানো হয়েছে।

বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রান্তের অংশে লোকজন তেমন ছিলেনই না। এ পাশের অনেক স্টলে সারা দিন বই বিক্রি হয়নি। উষারদুয়ার প্রকাশনীর প্রকাশক কাব্য সুলতানা বললেন, গত চার দিনে তার স্টলে কোনো বিক্রি হয়নি। স্টল দেওয়া, নতুন বই প্রকাশ মিলিয়ে তার ৬ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

বড় প্রকাশকদের স্টলেও এখন পর্যন্ত তেমন বিক্রি নেই। অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথের প্যাভিলিয়ন বাংলা একাডেমির প্রবেশপথের কাছে। জায়গাটি বেশ ভালো। কিন্তু বিক্রি আশাপ্রদ নয়। তিনি জানালেন, তিন ভাগের দুই ভাগ বিক্রি কমে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন উপন্যাস ‘নীলাঞ্জনা’ এসেছে তার স্টলে। প্রতিবার তার বই প্রথম দিনেই দুইশ-তিনশ কপি বিক্রি হয়ে যায়। এবার তা হয়নি। যারা বই কিনবেন, তারাই মেলায় আসছেন না বলে মন্তব্য করলেন তিনি।

অনেক প্রকাশকই বলেছেন, এখন করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। আবহাওয়াও মেলার উপযোগী নয়। এ সময় মেলা না করে তারা ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ থেকে করার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন করলেই ভালো হতো। কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালও একই মন্তব্য করলেন। বইমেলাটা একুশের চেতনার সঙ্গে জড়িত। কারও নির্দেশে সময়মতো এ মেলা হয়নি। সময় পরিবর্তন করায় মেলার প্রতি হৃদয়ের সেই টান অনুভব করেন না তিনি। এবার মেলায় তার চারটি উপন্যাস এসেছে। এর মধ্যে ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ১৯৭৫’ এনেছে অন্যপ্রকাশ, পার্ল এনেছে ‘অপরাজিতা’।

পর্যালোচনা সভা

বুধবার বিকেল পাঁচটায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সেমিনার কক্ষে অমর একুশে বইমেলা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সচিব অপরেশ কুমার ব্যানার্জি, মেলার সদস্যসচিব জালাল আহমেদ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি শ্যামল পাল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা।

সভায় আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুর্নব্যক্ত করা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেওয়া হয়।

প্রথমার বই

গতকাল প্রথমার স্টলে আরও দুটি নতুন বই এসেছে। এর একটি আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘বাসিত জীবন: সৈয়দ হকের সঙ্গে শেষ দিনগুলো’। বইটিতে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অসুস্থতা, চিকিৎসা এবং ওই সময় তিনি শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা লেখকের স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। বইটিতে সেই মূল্যবান কথাগুলো উঠে এসেছে।

অন্য বইটি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক মিলন দত্তের লেখা ‘কেমন আছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান’। দেশভাগের পর হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েন। তাদের মধ্য থেকে অভিজাত অংশটি পাকিস্তানে গিয়ে থিতু হয়। থেকে যায় আর্থিক ও শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া অংশ। তারা এখন কেমন আছে, সেই বিষয়টি উঠে এসেছে এ বইয়ে।

অন্যান্য বই

মেলায় নতুন বই এসেছে ১৯৪টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে চারুলিপি এনেছে শেখ হাসিনার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জনক আমার নেতা আমার’। কথাপ্রকাশ এনেছে শামসুজ্জামান খানের ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’। বিভাস এনেছে সৌমিত্র শেখরের লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নজরুল’, অবসর এনেছে এ কে এম শাহনাওয়াজের ‘ভারতীয় সভ্যতা’।

এমজে/