খালেদা জিয়া গৃহবন্দি: যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন

খালেদা জিয়া গৃহবন্দি: যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন

শর্তারোপ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। সরকারি আদেশে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হলেও দেশে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র বিষয়ক ২০২০ সালের উপর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কোন ধরনের উন্নতি ঘটেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ এবং নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে চলমান সহিসংতা নিয়ে প্রতিবেদনে উৎকণ্ঠা প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতি করার অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করে যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদনে বলা হয়, "এখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে (২০২০) ঢাকা সিটির যে নির্বাচন হয়েছে তাতে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং বিরোধী প্রার্থীদের উপর হামলা করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বৃটিশ হাইকমিশনার এবং অন্যান্য মিশনের দূতরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করায় সরকারের কটু কথা শুনতে হয়েছে। এরপর নভেম্বরে যে উপনির্বাচন হয় তাতেও সহিসংতা, ভীতি প্রদর্শন এবং ভোটারদের কোনঠাসা করার ঘটনা ঘটেছে।"

বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গৃহবন্দিত্ব প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "গত মার্চ মাসে (২০২০) ছয় মাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দেয়া হয় দেশে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না। পরে মুক্তির মেয়াদকাল বাড়ালেও তাকে গৃহবন্দি করেই রাখা হয়েছে।"

বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্যমতে ২২৫ টি বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড, ক্রসফায়ার এবং নির্যাতনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জড়িত। আগস্ট মাসে এক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার পর বিচারবর্হিভূত হত্যার বিষয়টি তীব্র জন অসন্তোষ তৈরি করে, এবং এসময় এটার মাত্রা কিছুটা কমে আসে। একবছরে অন্তত ৩১টি গুমের ঘটনা ঘটেছে।"

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, "গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপের মধ্যে রয়েছে। রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স এর প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্সে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান (১৫১তম)। আর্টিকেল ১৯ এর তথ্যমতে ৪৫১ জনের বিরুদ্ধে ১৯৮ টি মামলা করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। ৪১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এবং আটক করা হয়েছে অন্তত ৩২ সাংবাদিককে। একই আইনে যারা সরকারের করোনা মোকাবিলা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছে তেমন ৪০০ এর অধিক লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।"

এতে আরও বলা হয়, "আওয়ামী লীগের এক নেতার পতিতাবৃত্তির সিন্ডিকেট নিয়ে অনুসন্ধান করায় এক সাংবাদিককে ৫৩ দিন গুম করে রাখা হয় এবং পরে তার সন্ধান মিলে ভারত সীমান্তে।"

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, "সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে ৬৭ টির মতো হামলার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুরা তাদের জমি দখলের অভিযোগ করেছেন।"

নারীদের উপর সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, "নারীদের উপর সহিংসতা এখনও একটি বড় রকমের প্রতিবন্ধকতা। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে গত এক বছরে ১৬২৭ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ব্যবস্থার ঘাটতিকে দুষছেন মানবাধিকার কর্মীরা।"

রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তর প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদনে বলা হয়, "ভাসান চরে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা যাচাইয়ে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল কমিটির মূল্যায়ন নিতে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য অংশীদার দেশগুলো তাদের আহবান অব্যাহত রাখবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রিত করায় কোভিড চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবিক কাজ পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটেছে।"

কেবি/