এক্সিম ব্যাংকের ২ কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টা মামলা

রন, দিপু সিকদার নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সমঝোতা, দাবি বাদীর

রন, দিপু সিকদার নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সমঝোতা, দাবি বাদীর

এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় সমঝোতা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাদী এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। এদিকে এই দুই আসামিকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আদালতে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাদী-বিবাদীর মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তারা একটি সমঝোতা চুক্তি করেন।

গত ২৬ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রিপন উদ্দিন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বাদী ও বিবাদীর ভুল–বোঝাবুঝির কারণে এই মামলার উদ্ভব হয়েছে। পরে বাদী-বিবাদী নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে আসামিদের অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণাদিও পাওয়া যায়নি। মামলাটি ‘তথ্যগত ভুল মর্মে প্রতীয়মান হয়’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সমঝোতায় বাদী-বিবাদী বলেছেন, তদন্তের ফলাফল তারা মেনে নেবে এবং পরবর্তীকালে তাঁরা এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবেন না।

তবে মামলার বাদী সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, এজাহারে উল্লেখ করা ঘটনা সত্য। ঘটনা ঘটেছে বলেই মামলা হয়েছে। তবে আসামিপক্ষ নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে সমঝোতা করেছে। সেই সমঝোতায় ঘটনার বর্ণনাও আছে। তিনি বলেন, ‘তাদের (সিকদার গ্রুপ) একটি ব্যাংক (ন্যাশনাল ব্যাংক) আছে। তো ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক থাকেই। তারা বলেছে, “আমরা যা করেছি, সেটার জন্য দুঃখিত।” তারা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে। যা হয়েছে, সেটা ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তারা আরও বলেছে, “আমাদের আগের যে ব্যবসা আপনাদের সঙ্গে ছিল, সেটি চলবে।” এমন একটা পরিস্থিতিতে তারা যখন অ্যাপ্রোচ করল, তখন আমরা বলেছি, ঝগড়া করে তো লাভ নেই। আল্লাহ তো মাফ করে দেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, এমন কথা বললে, আমরা সেটি গ্রহণ করেছি। এই বলে তাদের সঙ্গে আমরা একটা সমঝোতা করেছিলাম। তারা পুলিশকে এটার একটা অনুলিপি দিয়েছে। যদি বলা হয় এটি মিথ্যা মামলা, তখন সরকার তো বলবে, “তুমি মিথ্যা মামলা করেছ।” তখন আমি সেটি দেখিয়ে দেব, মিথ্যা মামলা নয়, ঘটনা ঘটেছিল।’

এ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন পরীমনিকাণ্ডে আলোচিত ডিবি থেকে সদ্য বদলি হওয়া অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলায়েন। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপপরিদর্শক মো. রিপন উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গত বছরের ১৯ মে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সিকদার গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত বছরের ৭ মে রন ও দিপু এক্সিম ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দী করে রাখেন। তাদের গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়।

জব্দ গাড়ি, পিস্তল ও গুলি ফেরত দেওয়ার আবেদন

এদিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন ‘তথ্যগত ভুল’ দাখিল করে দুই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনের পাশাপাশি মামলায় জব্দ গাড়ি, পিস্তল ও গুলি বিবাদীদের ফেরত দেওয়ার আবেদন করেন। অবশিষ্ট আলামত ধ্বংস করার আবেদনও করেন তদন্ত কর্মকর্তা।