১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে

১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে

দেশে এখন ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু শ্রমের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। শিশু শ্রমিকদের ৩০ শতাংশই পরিবারের আয়ে সহায়তা করতে এই কাজে নেমেছে। মোট শিশু শ্রমিকের ১২.৮ শতাংশই সিটি করপোরেশন এলাকায় বলে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। আর পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলছেন, ঠেকায় পড়ে শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত। এটা খুবই বেদনাদায়ক।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশু শ্রমের এইসব তথ্য বিবিএসর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তারা প্রদান করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান অনুষ্ঠানে প্রদান অতিথি ছিলেন। বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান ই এলাহী।

বিবিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০২১ এর মাধ্যমে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম কমিয়ে আনার জন্য নতুন জরিপ শুরু করেছে বিবিএস। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জরিপ শুরু করেছে বিবিএস। আগামী ১৮ মাসের এই জরীপ প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৯১ হাজার টাকা বা ২ লাখ ৯৫ হাজার ১৯৩ দশমকি ৫৪ ডলার। জরিপের কাজ শেষ করা হবে ২০২২ সালের জুন মাসে। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০০২-২০০৩ মেয়াদে প্রথম সূচনা হয়। এরপরে ২০১৩ সালের দ্বিতীয় সমীক্ষা করা হয়। এখন তৃতীয় বারের মতো দেশে শুরু হলো জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা-২০২১।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে শিশু শ্রম বন্ধ হওয়া দরকার। আমরা প্রত্যেকে শিশু ছিলাম। আমাদের একটা দায়িত্ব শিশুশ্রম কমিয়ে আনা। শিশুশ্রম অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটা বিষয়। তবে পশ্চিমাদেশ যতো ধনী হোক না কেন শিশুরা কাজ করে পয়সা কামাই করে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং ২০১৩ এর সংশোধনী অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে তাদের বোঝায়। এই শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।

বিবিএস ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যৌথভাবে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। ২০১৩ সালের জরীপ তথ্যানুযায়ী দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের শিশু বলা হচ্ছে। মোট শিশুর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হলো শিশুশ্রমিক। ১২ লাখ ৮০ হাজার ঝুঁকিপুর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের মধ্যে ছেলে ৭ লাখ ৭০ হাজার এবং মেয়ে ৫ লাখ ১০ হাজার। আর দেশে সবথেকে শিশুশ্রম বেশি চট্টগ্রামে। সেখানে এই হার ১১.৬ শতাংশ। এরপর ১১.৪ শতাংশ ঢাকা ও সিলেটে। তবে মোট শিশুশ্রমিকের ১২ দশমিক ৮ শতাংশ হলো সিটি করপোরেশন এলাকায়। শিশুশ্রমিকদের মধ্যে শিল্পে ৪১ শতাংশ, কৃষিতে ৩০ শতাংশ এবং সেবা খাতে ২৯ শতাংশ নিয়োজিত।

প্রায় একদশকের ব্যবধানে কর্মরত শিশুর সংখ্যার পাশাপাশি শিশুশ্রম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিবিএসের ২০০৩ সালের জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় দেখা গেছে, তখন প্রায় ৭৪ লাখ কর্মরত শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৭৯ হাজার শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় ছিল। তবে এক দশকের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা তেমন কমেনি, কমেছে মাত্র ১১ হাজার। ২০০৩ সালে দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতিমালায় ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। এখন ২০২৫ সালে মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের নতুন টার্গেট দেয়া হলো।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ইনফরমাল চামড়া খাতে শিশুশ্রমিক রয়েছে। ফরমাল খাতে হয়তো নেই। আমাদের পরিবহণ খাতও শিশুশ্রমের জন্য এলামির্ং। এখাতে নতুন নতুন যেসব পরিবহণ যুক্ত হচ্ছে তাতে শিশুশ্রমিকদের নেয়া হচ্ছে।

এমজে/