৫ বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার দক্ষ শ্রমিক নেবে জাপান

৫ বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার দক্ষ শ্রমিক নেবে জাপান

পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমবাজার তৈরি হয়েছে আগেই। দেশটিতে বিনা খরচে পাঁচ বছরে মোট তিন লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি দক্ষ লোক যেতে পারবে। ইতোমধ্যে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা মোতাবেক জাপানে বেশ কিছু দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে টাকা নেয়ার অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ও দক্ষকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ও নৈতিকতা মেনে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। জাপান যাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দেশটির ভাষা জানতে হবে।

সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর জাপানের টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ও দক্ষকর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়ায় মসৃণভাবে কাজ করা সংক্রান্ত এক ভার্চুয়ালি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দীন আহমদ এ সভায় যুক্ত হয়ে জাপানে বাংলাদেশী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও সুশৃঙ্খল বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দেন। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের এমন আহবান জানিয়ে জাপানে নতুন প্রবেশ করা শিক্ষার্থী, প্রযুক্তিগত ইন্টার্ন এবং নির্দিষ্ট দক্ষকর্মীদের বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে অনুপ্রাণিত করার আহবান জানান তিনি।

আলোচনা সভায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শায়খ মুহাম্মদ রেফাত আলী যুক্ত হয়ে অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দেন।

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো: জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় অংশগ্রহণকারী স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মো: নাসিরুল হাকিমসহ কেউ কেউ শ্রমবাজার ইস্যু সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে দূতাবাস থেকে জানানো হয়। এর আগে শ্রম কাউন্সেলর জাপানের শ্রম বাজারের সার্বিক হালনাগাদ তথ্যের ওপর একটি পিপিটি উপস্থাপন করেন।

এর আগে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ও স্পেশিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) সেন্ডিং অর্গানাইজেশন হিসেবে নির্বাচন করে তালিকাভুক্ত করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

১৬টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, টাইমস এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, নাভিরা লিমিটেড, ইস্টার্ন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড, অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল, আল জান্নাত ওভারসিস প্রাইভেট লিমিটেড, বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ওভারসিস, ফ্লাই এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ফুজিতা ওভারসিস, জাপান বাংলাদেশ ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড, রিয়াজ ওভারসিজ, আর এক্স কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সাদিয়াটেক লিমিটেড ও সাউথ পয়েন্ট ওভারসিস। পরবর্তীতে এই সংখ্যা ২৮টি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ ও জাপানে কর্মী পাঠাতে সহযোগিতা করতে অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠায় একটি এজেন্সির অনুমতিপত্র বাতিল করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে আগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ ৬১ হাজার ৪০০ দক্ষকর্মী নেবে জাপান সরকার। এ নিয়ে জাপান সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়। ১৪ ক্যাটাগরিতে তারা এই কর্মী নেবে। তবে কর্মীদের জাপানি ভাষা জানতে হবে। জাপানের ইমিগ্রেশন বিভাগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, প্রথম বছর দেশটি ভিসা দেবে ৪৭ হাজার ৫৫০ জনকে। জাপান সরকার চীন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে কর্মী নেয়া হলেও কূটনৈতিক তৎপরতায় নতুন করে এবার বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নার্সিং কেয়ার শ্রেণীতে ৬০ হাজার কর্মী নেবে জাপান। জাপানের মানুষের গড় আয়ু ৮৪ বছর হলেও ১০০ বা তার অধিক বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এসব মানুষের সেবা দেয়ার জন্যই এই শ্রেণীতে বেশি লোক নেয়ার চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁয় ৫৩ হাজার, নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) ৪০ হাজার, ভবন পরিষ্কার ৩৭ হাজার, কৃষিতে ৩৬ হাজার ৫০০, খাবার ও পানীয় শিল্প ৩৪ হাজার, সেবা ২২ হাজার, মেটেরিয়ালস প্রক্রিয়াজাতকরণে ২১ হাজার ৫০০, অটোমোবাইল রক্ষণাবেক্ষণে ২১ হাজার ৫০০, জাহাজনির্মাণে ১৩ হাজার, মৎস্যশিল্পে ৯ হাজার, শিল্প যন্ত্রপাতিতে ৭ হাজার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ৪ হাজার ৭০০ এবং এয়ারপোর্ট গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অ্যান্ড এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণে দুই হাজার ২০০ লোক নেয়া হবে।

এসব কর্মী প্রশিক্ষণের পর উত্তীর্ণ হলে জাপানের ব্যবস্থাপনায় আরো ৪ মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে ওই কর্মীকে জাপানে পাঠানো হবে। একজন কর্মী জাপানের শ্রম আইন অনুযায়ী ঘণ্টায় ৭০০ টাকা করে পাবেন। কর্মীরা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। সেই হিসাবে মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা রোজগার করার সুযোগ রয়েছে।