কোটা সংস্কার আন্দোলন

দেশজুড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

দেশজুড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

ঢাকা, ৯ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন। আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের পাশাপাশি ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিও করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল।

রোববার রাতেও ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে বিক্ষোভ করছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকে সর্বাত্মক ধর্মঘট চলছে। নির্ধারিত রুটিনের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তারা ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের কোনো বাস সকালের শিফটে ক্যাম্পাস ছেড়ে যায়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা গেছে।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছেন। সকাল থেকে শুরু হওয়া ওই বিক্ষোভ মিছিল পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছে। বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে ছাত্রছাত্রীরা বের হয়ে মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। আজ বেশিরভাগ বিভাগেই ক্লাস–পরীক্ষা হয়নি।

এ বিষয়ে প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমি প্রধান ফটকের সামনে আছি। আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এই ক্যাম্পাসে ঘটবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় নেমে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অন্দোলনকারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করারও ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। শত শত শিক্ষার্থী রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে কোটা সংস্কারের স্লোগান দিচ্ছেন।

পাশাপাশি নগরীর ষোলশহরে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়


চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইন অবরোধ করে রেখেছেন।

আজ সোমবার সকাল থেকে তারা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন।

শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বলেন, পাঁচ দফার বিষয়ে পরিষ্কার ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস করবো না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আশ্বাস চাই না, আমাদের দাবি মানতে হবে।

নাম প্রকাশ না করে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলছেন, বর্তমানে দেশের অধিকাংশ মানুষ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে। সবার মুখে একই কথা, কোটা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। বর্ধিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন-পরিমার্জন এখন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে মেধাবীদের সুযোগ দেয়া আবশ্যক।

এঘটনায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

ময়মনসিংহ জংসন রেলস্টেশনের সুপার জহিরুল হক জানান, কৃষি বিশ্বদ্যিালয় রেলস্টেশনে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করায় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া এক্সপ্রেস ফাতেমানগর রেলস্টেশনে, তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস গফরগাঁও রেলস্টেশনে এবং ঢাকাগামী বলাকা ট্রেন ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের পাশাপাশি ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।

সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রধান ফটক থেকে উঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন তারা। সর্বশেষ উভয়পক্ষ প্রধান ফটকে অবস্থান করছিলেন।

ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। ছাত্রলীগের অবস্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও প্রায় সব বিভাগেই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।

এ ছাড়া কোটা সংস্কারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন।

উল্লেখ্য, রোববার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৪৩০ঘ.)