পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়। পুলিশ দায়িত্ব পালনের সময় ১ হাজার জনকে হত্যা করে।
আব্দুল মোমেন বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, আলোচনা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত দেশবাসী পছন্দ করেনি।
বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্লিঙ্কেন তাকে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তি রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার জন্য ঢাকা ও ওয়াশিংটনের অনেক সুযোগ রয়েছে।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, 'আমি বলেছি, আপনার সঙ্গে আমাদের অনেক কথা আছে। আপনি (নিষেধাজ্ঞার আগে) আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারতেন।'
জবাবে ব্লিঙ্কেন তাকে বলেছেন, 'আপনিও আমাকে কল করুন। নির্দ্বিধায় আমাকে কল করুন।'
'আমি বলেছি আমরা শিগগির দেখা করব, সংলাপ করব। তিনি খুব ইতিবাচক ছিলেন। তিনি আমাদের প্রতি যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, তা আমার খুব পছন্দ হয়েছে', যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত ১০ ডিসেম্বর গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিত্তিতে র্যাবের ৭ বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পরদিন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে তলব করে বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচিতে থাকাকালীন বঙ্গভবনে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে ব্লিঙ্কেন তাকে ফোন করেন।
`আমরা খুব উষ্ণ পরিবেশে কথা বলছিলাম। দীর্ঘ কথোপকথন হয়েছিল', মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
আলোচনা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত দেশবাসী পছন্দ করেনি উল্লেখ করে এ কে আব্দুল মোমেন ব্লিঙ্কেনকে বলেন, 'আপনাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের খুব বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব। আমরা এমন একটি দেশ, যারা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করি। তাই আমরা আশা করেছিলাম আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের জানাবেন। তাই আমরা বিষয়টি পছন্দ করিনি।'
তিনি ব্লিঙ্কেনকে ব্যাখ্যা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অগ্রাধিকার, যেমন-চরম সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, মানব পাচারের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে র্যাব বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা খুবই দুঃখজনক।
হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশে একটিও সন্ত্রাসী হামলা হয়নি এবং তা র্যাবের কারণেই সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'জনগণও র্যাবকে বিশ্বাস করে এবং র্যাব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়।'
ব্লিঙ্কেন বলেন, তারা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। আলোচনার জন্য তাদের দরজা খোলা রয়েছে।
'আমি বলেছি, যারা মানবাধিকার রক্ষা করে, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। আমি আরও বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়। পুলিশ দায়িত্ব পালনের সময় ১ হাজার জনকে হত্যা করে', মোমেন বলেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, 'ঢাকা ও ওয়াশিংটনের জলবায়ু পরিবর্তন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের মতো ইস্যুতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বর্তমান প্রশাসন গণতন্ত্রকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।'
ব্লিঙ্কেনের কাছে র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে মোমেন বলেন, তিনি সরাসরি তা বলেননি। তবে কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল সেটাই।
মন্ত্রী বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। আমার বলা উচিত যে, কংগ্রেসের কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।'