সুগন্ধায় মিলল আরও ২ লাশ, আটজনের নামে মামলা

সুগন্ধায় মিলল আরও ২ লাশ, আটজনের নামে মামলা

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বিষখালী নদীর চর ভাটারকান্দা এলাকা থেকে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড।

ওই কিশোরের পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর পরনে নীল রঙের জ্যাকেট ও জিনস প্যান্ট ছিল। ওই কিশোরের আনুমানিক বয়স ১২–১৩ বছর। দুপুর দুইটার দিকে লাশটি ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে নিয়ে আসা হয়েছে।

এর আগে সকালে লঞ্চঘাটের মাঝসুগন্ধায় ভাসমান অবস্থায় ৩০ থেকে ৩২ বছরের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর গায়ে কালো রঙের গেঞ্জি ও কালো প্যান্ট ছিল। লাশের মুখমণ্ডল ছিল আগুনে ঝলসানো।

আজ সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা মো. শহিদুল ইসলাম। লাশটি উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করা হলো। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪২ হলো।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ যাত্রীর স্বজন মো. মনির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক, চালকসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল সকালে সদরের চর সাচিলাপুর থেকে উদ্ধার হওয়া লাশটি ছিল লঞ্চের বাবুর্চি মো. শাকিলের। ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ শাকিলের লাশ দুই মামা লুৎফর রহমান ও মো. মাহফুজের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাশ দাফনের ২৫ হাজার টাকা এখনো বুঝে পাননি তাঁরা। জেলা প্রশাসন বলছে, উদ্ধার হওয়া লাশের বাড়ি যে জেলায়, সেখানকার জেলা প্রশাসন আর্থিক অনুদান বুঝিয়ে দেবে। বাবুর্চি শাকিলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। লাশ বহন করার মতো আর্থিক অবস্থা শাকিলের পরিবারের নেই।

শাকিলের মামা মো. মাহফুজ বলেন, ‘শাকিলের লাশ ঝালকাঠি থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নিতে অ্যাম্বুলেন্সভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাতে এত টাকা নেই। ঝালকাঠির প্রশাসন বলছে, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাশ দাফনের ২৫ হাজার টাকা বুঝে নিতে হবে।’

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাছবীর হোসেন বলেন, শাকিলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে হওয়ায় তাঁর পরিবারকে সেখানকার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুদানের টাকা বুঝে নিতে হবে।

মামলার বাদী মো. মনির হোসেন ঢাকার ডেমরা এলাকার একজন ইট-বালু ব্যবসায়ী। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মনির হোসেনের বোন, ভাগনিসহ চারজন নিখোঁজ।

ঝালকাঠি সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি অপারেশন) মো. মালেক বলেন, ঢাকার ডেমরা এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে মো. মনির হোসেনের লিখিত এজাহারটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ, লঞ্চে থাকা দুই মাস্টার রিয়াজ সিকদার ও মো. খলিল, দুই চালক মো. মাসুম ও মো. কালাম, তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার, সুকানি মো. আহসান ও কেরানি মো. কামরুল।

মামলার বাদী মনির হোসেন বলেন, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় তাঁর বোন তাসলিমা আক্তার (৩২), দুই ভাগনি সুমাইয়া আক্তার (১৫) ও সুমনা আক্তার (১০) এবং ৭ বছর বয়সী ভাতিজা জোনায়েদ ইসলাম এখনো নিখোঁজ।

ঝালকাঠিতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় এটি দ্বিতীয় মামলা। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর একই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। সেটির বাদী হয়েছেন ঝালকাঠি সদরের পোনাবালিয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন লাগে।