অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন

মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার ও কর্মকর্তারা দায়ী, ২৫ দফা সুপারিশ

মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার ও কর্মকর্তারা দায়ী, ২৫ দফা সুপারিশ

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় লঞ্চটির চারজন মালিক, মাস্টার, ড্রাইভার ও কর্মকর্তাদের দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। সোমবার রাতে কমিটির আহ্বায়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন। প্রতিবেদনে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে ২৫ দফা সুপারিশ ও করণীয় উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন।

আগুনের সূত্রপাত লঞ্চের ইঞ্জিন থেকেই হয়েছে উল্লেখ করে মালিকদের দায় নির্ধারণ করে কমিটি বলছে, নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির দুটি ইঞ্জিনের মোট ক্ষমতা ছিল ১১০০ অশ্বক্ষমতার (বিএইচপি)। কিন্তু মালিকেরা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে সনদের শর্ত ভেঙে অন্য জাহাজের পুরোনো ৩০৩৬ বিএইচপির ইঞ্জিন সংযোজন করেন। পরিবর্তিত ইঞ্জিন লঞ্চটির জন্য উপযুক্ত কি না, তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হয়নি। অভ্যন্তরীণ জাহাজ বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো নৌযানে ১০২০ কিলোওয়াট বা ১৫০১.৯২ বিএইচপির চেয়ে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন সংযোজন করলে লঞ্চে ইনল্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার (আইএমই) নিযুক্ত করতে হয়।

কিন্তু লঞ্চটিতে এই পদের কেউ ছিলেন না। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ডকইয়ার্ডে লঞ্চটিতে পুরোনো ইঞ্জিন সংযোজন করার কারণে ডকইয়ার্ডের মালিককেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে কমিটি বলছে, প্রায় তিন মাস বসে থাকার পর লঞ্চটি পুনরায় চালু হয়। এ সময় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক ও পরিদর্শক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকেরা কেউই ভালোভাবে লঞ্চটি পরীক্ষা করেননি।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ লঞ্চটির ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে খোঁজ রাখেননি। তিনি লঞ্চটি পরিদর্শন করে চলাচলের জন্য অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছিলেন। জাহাজ জরিপকারক তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। কম লঞ্চ চালিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের ‘রোটেশন’ প্রথা বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিটি। মালিকদের এ কৌশলের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম লঞ্চ থাকে। এ সুযোগে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়। এতে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।

এমজে/