কুয়েট অধ্যাপকের মৃত্যু: বাবা মামলা করতে এসেছিলেন, নেয়নি পুলিশ

কুয়েট অধ্যাপকের মৃত্যু: বাবা মামলা করতে এসেছিলেন, নেয়নি পুলিশ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা। সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ৫৬ দিন পর আজ বুধবার খুলনার খানজাহান আলী থানায় হত্যা মামলা করতে এসেছিলেন তাঁর বাবা শুকুর আলী ও স্বজনেরা।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, আগে এ বিষয়ে তদন্ত হবে। মামলা নেওয়া যাবে কি না, সেটি তারপর বোঝা যাবে।

গত ৩০ নভেম্বর ইইই বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছে ভাড়া বাসায় মারা যান। অভিযোগ ওঠে, মৃত্যুর দিন দুপুরে বাসায় ফেরার পথে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অধ্যাপক সেলিমকে বিভাগে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর ওপর মানসিক নিপীড়ন চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বলছে, এটি হত্যাকাণ্ড। অধ্যাপক সেলিমের পরিবারও এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছে।

অধ্যাপকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ জানুয়ারি কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি। এ ছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ শিক্ষার্থীদের সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।

মামলা করার জন্য বুধবার সকালে অধ্যাপক সেলিমের বাবা মো. শুকুর আলী মোল্যা, ভগ্নিপতি মো. আবুল কালাম আজাদ ও মামা খন্দকার মো. আমিরুল ইসলাম খুলনা আসেন। ওই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া ৪৪ শিক্ষার্থীর নামে এজাহার দায়ের করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

মো. শুকুর আলী মোল্যা বলেন, ‘কুষ্টিয়া থেকে এজাহার লিখিয়ে এনে সকাল ১০টার দিকে থানায় গিয়েছিলাম। সবকিছু বলার পর তাঁরা বললেন, এজাহারে ভুল আছে। আমরা সেগুলো ঠিকঠাক করে সাড়ে ৪টার সময় আবার থানায় গেছি। তখন ওসি থানায় ছিলেন না।’

পরে ওসি এসে বলেন, ‘মামলা আমি নিলে সমস্যা আছে। এর সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত। আমার পক্ষে মামলা নেওয়া সম্ভব না। ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমি তদন্ত করতে পারব না। ফরেনসিক রিপোর্ট নেগেটিভ এলে আমাদের কিছু করার থাকবে না। তার চেয়ে আপনারা আদালতে গিয়ে মামলা দেন। আদালত পিবিআইকে যদি তদন্তের নির্দেশ দেন সেটা ভালো হবে।’

শুকুর আলী আরও বলেন, ‘এখন কী করব, কী বলব বুঝতে পারছি না। মামলা কেন নেবে না। যদি নাই–ই নেবে, তাহলে সারা দিন এত ঘোরাঘুরি করাল কেন?’ ৫৬ দিন পর মামলা করতে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেলিমের মারা যাওয়ার বেশ পরে জানাজানি হয়েছে সে কীভাবে মারা গেল। আবার আমি অসুস্থ ছিলাম। পরিবারে অন্য লোকজনও নেই। সব মিলিয়েই দেরি হয়েছে।’

এ বিষয়ে খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘নিচ্ছি না এ রকম কোনো কিছু না। ওনারা অভিযোগ দিয়েছেন, সেটা তো আমাদের দেখতে হবে। এখন ওটা অভিযোগ আকারে নিয়ে রাখা হয়েছে। ওনারা ওনাদের মতো করে দিয়েছেন। আমাদের একটা তদন্তের বিষয় আছে। এতগুলো শিক্ষার্থীর বিষয়। বিষয়টি আগে তদন্ত করা হবে। তারপর মামলা হবে কি না, সেটা বোঝা যাবে।’