পুলিশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ বাংলাদেশের

পুলিশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ বাংলাদেশের

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই দেশের ‘লেহি আইন’ অনুযায়ী ওই সংস্থাকে কোনও সহায়তা দিতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচারিক বিভাগকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

সোমবার (১১ এ্রপ্রিল) নিজ দফতরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে আলাপকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন একথা বলেন। গত ৪ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রশিক্ষণ ও সহায়তার সঙ্গে লেহি আইন জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, ১ জানুয়ারি থেকে আইন বলবত হয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী কোনও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা থাকলে সেই সংস্থাকে কোনও সহায়তা দেওয়া যায় না। আমরা বলেছি বাংলাদেশের পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।

অতীতে র‌্যাবকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেটা যেন আবারও দেওয়া হয় সে বিষয়ে বাংলাদেশ বিশেষভাবে জোর দিয়েছে বলে তিনি জানান।

নিষেধাজ্ঞা তথ্যে সন্দেহ
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বেআইনি কর্মকাণ্ড ঠেকানোর জন্য র‌্যাবের ভেতর বিভিন্ন ধরনের মেকানিজম আছে। ওই প্রক্রিয়ায় অনেকের শাস্তি হয়েছে। এই তথ্যগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, যে তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ কিনা সে ব্যাপারে আমাদের কিছুটা সন্দেহ আছে। এ কারণেই বারবার আমাদের সম্পূর্ণ তথ্য তাদের সঙ্গে আমরা শেয়ার করেছি। আগামীতেও করবো। এটা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমাদের কিছুটা সাহায্য করবে।

গোটা বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী নিয়োগ করা হবে।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং এই আইনি ইস্যুটি যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় এটিকে প্রত্যাহার করতে হবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে যে প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে, একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেটিকে বাতিল করতে হবে। এটা আমরা পূরণ করছি। যতটুকু বলার সেটুকু আমরা বলেছি। তুলে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যে প্রক্রিয়ায় এটিকে তুলে নেওয়া হয় সেটিকে অনুসরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যক্তির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি তুলতে গেলে এক ধরনের প্রক্রিয়া। সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলতে গেলে আরেক ধরনের প্রক্রিয়া।

উল্লেখ্য র‌্যাব এবং এর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত চার মাসে কোনও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়নি। এটিকে তার ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।

সম্পর্কের টানাপড়েন
র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেকে মন্তব্য করছেন যে দুদেশের মধ্যে টানাপড়েন দেখা দিচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। এটা কিভাবে আমরা অতিক্রম করতে পারি সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের মানবাধিকার, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং শ্রম ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সে বিষয়গুলোতেও আমরা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।