ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রার্থীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, দুজনের নিয়োগ স্থগিত

শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রার্থীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, দুজনের নিয়োগ স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের একজন অধ্যাপকের ‘কুপ্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন এক প্রার্থী। এমন অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর দুজন প্রভাষক নিয়োগে ওই বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের করা সুপারিশ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বলছেন, অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে সিনেট ভবনে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড বসে। সেখানে অস্থায়ী প্রভাষক পদে দুজন এবং স্থায়ী সহকারী অধ্যাপক পদে আরও দুজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এরপর বিষয়টি অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় ওঠে।

একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের বিষয়টি উঠলে এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগের চিঠি সিন্ডিকেটে উত্থাপিত হয়। এই নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ না পাওয়া এক প্রার্থীর দেওয়া ‘যৌন নির্যাতন ও শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য প্রসঙ্গে’ শিরোনামের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি এই বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্রী ৷ ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের আগে বিভাগের ওই অধ্যাপক আমাকে একটি অত্যন্ত অনৈতিক ও ঘৃণ্য প্রস্তাবসহ আমার স্পর্শকাতর স্থানে পাশবিকভাবে নির্যাতন করেন ৷ তখন আমি অনুষদের তৎকালীন ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। তখন শিক্ষক নিয়োগে তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়া আমাকে বাদ দিয়ে আমার সমান ফলধারী এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালে আবারও শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে আমি আবারও আবেদন করি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করা সত্ত্বেও এবারও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই৷ ’

অভিযোগটি নিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনার পর সিন্ডিকেট ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষকের দুটি পদে নিয়োগের সুপারিশ স্থগিত করে বলে জানান ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাঁরা বলেন, স্থায়ী সহকারী অধ্যাপক পদে দুজনের নিয়োগের সুপারিশ বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট ওই প্রার্থীর অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসার পর ওই প্রার্থীর অভিযোগ ও অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অভিযোগকারী প্রার্থী ২০১৮ সালে অনুষদের তৎকালীন ডিন বরাবর লিখিত অভিযোগ করার কথা বললেও বিষয়টি প্রথম আলো নিশ্চিত হতে পারেনি। আসলেই এমন কোনো অভিযোগ করা হয়েছিল কি না বা অভিযোগ করা হয়ে থাকলে কোনো তদন্ত কমিটি বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। এসব বিষয়ে জানতে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েক দফায় কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক দাবি করেন, অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা। তার ভাষ্য, ‘ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম সিন্ডিকেট সভায় একটি চিঠি উত্থাপন করে জানান, একজন নারী প্রার্থীকে আমাদের বিভাগে ২০১৯ সালের নিয়োগে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়নি। অবশ্য ওই নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডে শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম নিজেও ছিলেন। তখন (২০১৯) নাকি ওই প্রার্থী তাঁর কাছে আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। অথচ এমন কিছুই আমি কখনো শুনিনি। অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা। সোমবার আমাদের বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড বসেছিল। সেখানে ওই প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশ পাননি। এরপর তিনি মঙ্গলবার আবার একই অভিযোগ সিন্ডিকেটে উত্থাপন করেছেন। তার মানে, তাঁকে নিয়োগের সুপারিশ করা হলে তিনি অভিযোগটি করতেন না।’