ফিরতেও ভোগান্তি

ফিরতেও ভোগান্তি

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে শ্রমজীবী মানুষ। এরই মধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নৌপথ। তবে ফিরতি পথেও ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রীদের। পথে পথে দুর্ভোগ মিলেমিশে নৌপথে এসে যোগ হয়েছে বাড়তি ঝক্কি-ঝামেলা। ফেরিতে যাত্রীবাহী পরিবহন পারাপার না করায় ছোট ও হালকা যানবাহন নিয়ে পারা হচ্ছে ফেরিগুলো। ফলে যাত্রীদের লঞ্চ আর স্পিডবোটই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সুযোগে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন যাত্রীরা।

শুক্রবার (৬ মে) সকাল থেকে দেশের অন্যতম নৌপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল ১০টার পর বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধি পায়। অনেকের শনিবার অফিস থাকায় একদিন আগেই ঢাকায় যাচ্ছেন। আর শনিবার থেকে লঞ্চগুলোতে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, তিন নাম্বার ফেরি ঘাটে ‘এনায়েতপুরী’ ফেরিটি নোঙর করার দশ মিনিটেই পুরো ফেরি মোটরসাইকেল আর কয়েকটি প্রাইভেটকারে ভর্তি হয়ে গেলো। পা ফেলার জায়গা নেই। মুহূর্তের মধ্যে ফেরির মাস্টার সিগনাল দেয়ায় ছেড়ে গেলো ফেরিটি। এরপরে একই ঘাটে আসলে ফেরি ‘কুঞ্জলতা’ আসতে না আসতেই মোটরসাইকেলে ভর্তি হয়ে গেলো। সঙ্গে দু’ তিনটি মাইক্রোবাস উঠতে পেরেছে। এমন দৃশ্য সকাল থেকেই হচ্ছে। ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বার বার মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে হুশিয়ারি বার্তা। শুধু তিন নাম্বার ঘাটই নয়, অন্য ফেরি ঘাটগুলোর প্রায় একই চিত্র। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যাত্রীরা ঈদ শেষে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।

পটুয়াখালী থেকে আসা যাত্রী হিরু মোল্লা জানান, ঈদ আসলেই আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঘাটে আসলে ফেরিতে উঠতে পারি না। লঞ্চে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ। পা ফেলার জায়গা নাই। ভাড়া খুব বেশি না নিলেও যাত্রীদের চাপে শেষ হয়ে যাই। যদি লঞ্চে টিপের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে দুর্ভোগ কমবে। আর পুলিশ যদি লঞ্চের মালিকদের চাপ দেয় কম যাত্রী নিতে তাহলে সমস্যা থাকে না।

বরিশালের উজিরপুরের যাত্রী আহমেদ রতন বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে আসছি ঈদ করতে। যাওয়ার সময় যেমন ফেরিতে উঠতে কষ্ট হয়েছে, ঠিক তেমনই ফেরার পথেও একই কষ্ট। দীর্ঘ সময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ ঘাটে বড় বড় ফেরি নোঙর করে রাখা। এই সময়ে যদি ফেরিগুলো ছাড়া হতো, তাহলে এতো কষ্ট হতো না। কি কারণে এমন করে রাখতে জানি না। এদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।

বাংলাবাজার ঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিটিসি’র ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন বলেন, এই ফেরিঘাটে আজ ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ রয়েছে। সাতটি ফেরি এই ঘাটে যাত্রী এবং যানবাহনগুলো পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি ফেরিতেই ব্যাপক চাপ রয়েছে। তবে ঈদ শেষ হলেও কিছু সংখ্যক যাত্রী এখনও গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। এজন্য ৮৭টি লঞ্চ ছাড়াও একশ’র বেশি স্পিডবোট চলছে। কোথাও কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর চুরি ছিনতাই রোধে।

বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাসগুলোর যাত্রীরা নদী পার হয়েছে। তবে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ তুলনামূলক অন্য বছরের চেয়ে কম। গতবছর যে পরিমাণে চাপ ছিল, তার অর্ধেকও এবার নাই। তার অন্যতম কারণ লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু থাকা। গতবার এসব বন্ধ ছিল।

লঞ্চ ঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র পুলিশ পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, প্রতিবারই ঈদ শেষে ফেরার পথে যাত্রীদের চাপ একটু বেশি থাকে। এবারও দু’দিন ধরে যাত্রী চাপ রয়েছে। আমরা প্রতিটি লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার না করে সেজন্য লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের চাপ দিয়ে আসছি। অনেক সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়া করে লঞ্চে উঠে তখন আর তেমন কিছু করার থাকে না। তাও চেষ্টা করছি নিয়ম মেনেই যাত্রীরা পারাপার হোক।