বিশ্ব গণমাধ্যমে সীতাকুণ্ডের ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর

বিশ্ব গণমাধ্যমে সীতাকুণ্ডের ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে কাশেম জুটমিলসংলগ্ন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

রয়টার্স, এপি, বিবিসি, আলজাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল এবং ভারতীয় প্রথম সারির গণমাধ্যমসহ প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে এসেছে এ খবর।

দুর্ঘটনার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ঘটনার তাৎক্ষণিক খবরও প্রচার করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়মিত আপডেট দিয়ে যাচ্ছে বিবিসি বাংলা।

তারা শিরোনাম করেছে— ‘কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে দমকলকর্মীসহ অন্তত ৩৯ জন নিহত।’

এ ছাড়া বিসিবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— সীতাকুণ্ড শহরের একটি কনটেইনার স্টোরেজে আগুন নেভানোর জন্য দমকলকর্মীদের ডাকার পর সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ডিপোর কিছু কনটেইনারে রাসায়নিক পদার্থ মজুত ছিল বলে জানানো হয়েছে। আর এর জেরেই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে একটি কনটেইনার ডিপোতে বিশাল অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ১৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) দূরে সীতাকুণ্ডে শনিবার রাতে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। আর এর জেরে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে একটি বিশাল অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত এবং ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।

কলকাতার গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে— ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রামে রাসায়নিকের গুদামে পর পর বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে মৃত অন্তত ৩২, দগ্ধ শতাধিক।’

তারা লিখেছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৩২ জনের। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন দেড়শর বেশি। আহতদের মধ্যে ডিপোর কর্মী ছাড়াও রয়েছেন পুলিশ ও দমকলকর্মীরাও। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমের বাংলা সংস্করণ শিরোনাম করেছে— ‘বাংলাদেশ: বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে ৫ দমকলকর্মীসহ মৃত ৩২।’

প্রতিবেদনে তারা লিখেছে— যত সময় যাচ্ছে, তত ভয়াবহ আকার নিচ্ছে বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডে আগুন লাগার ঘটনা। সকালে জানা গিয়েছিল ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ঘটনায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা প্রথমে ১৬ এবং তার পরে ৩০ ছাড়িয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, বাংলাদেশের কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্দর চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিমি। জানা গেছে, এ কনটেইনার ডিপোতে কম করে ৬০০ ব্যক্তি কাজ করেন। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস, গালফ নিউজ, ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালসহ আরও অনেক গণমাধ্যম।

এ ছাড়া ডিপোতে ভয়াবহ আগুন, বিস্ফোরণের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুক এবং টুইটারেও ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার রাত ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে কাশেম জুটমিলসংলগ্ন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই আগুনে কেমিক্যাল কনটেইনারে বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। ভেঙে পড়ে আশপাশের ঘরবাড়ির দেয়াল ও জানালা।

আগুন ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শনিবার রাত থেকে জ্বলতে থাকা আগুন ও বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ৮ কর্মীসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪১ জন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৪শর বেশি দগ্ধ ও আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, সিএমএইচসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।