খাবারের জন্য হাহাকার

খাবারের জন্য হাহাকার

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার চান্দের মহল্লা গ্রামের বাসিন্দা বিধবা স্বপ্ন আক্তার চারটি সন্তান নিয়ে পাঁচদিন ধরে পানিবন্দী। বন্যার শুরু থেকেই প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার কর্জ করে চললেও এখনও পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের দেখা পাননি তিনি।

এভাবে চলতে থাকলে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হবে বলে স্বপ্না জানিয়েছেন।
স্বপ্না জানান, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে সেলাইয়ের কাজ করে চার সন্তানকে নিয়ে তার সংসার চলে। ঘরে কখনও টাকা জমা থাকে না। গত শুক্রবার পর্যন্ত কাজ করেছেন। কিন্তু গত শনিবার থেকে বন্যা শুরু হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েন। কয়েকদিন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার নিয়ে সন্তানদের খাইয়েছেন। এখন কেউ ধার দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন স্বপ্না।

একইভাবে ত্রাণ পাননি বলে জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের বন্যা কবলিত রিমু আক্তার, রাসেল মিয়া, আওলাদ মিয়াসহ আরও অনেকেই। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও, চাহিদার তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

প্রশাসনের হিসাবে হবিগঞ্জ জেলায় সাতটি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন বন্যায় ডুবেছে। তবে এখন বৃষ্টি কমে আসায় পানি কিছুটা কমলেও পানিবন্দী লাখো মানুষ। বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্যের অভাব চারদিকে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা সংগঠন ত্রাণ নিয়ে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

তবে জেলায় মোট সরকারি বরাদ্দকে বন্যা কবলিতদের মাথাপিছু হিসাব করলে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর এ সাহায্যে চলছে না। তাঁরা আরও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

৫১টি ইউনিয়নে বন্যা কবলিত পরিবার যদিও অনেক বেশি, কিন্তু সরকারি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ২৩ হাজার ২৩৫টি। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারে গড় সদস্য সংখ্যা ৫ জন। সেই অনুযায়ী হবিগঞ্জে বন্যা কবলিত মানুষ ১ লাখ ১৬ হাজার ১৭৫ জন।

প্রশাসন এখন পর্যন্ত দুর্গতদের মাঝে ২০০ টন চাল বিতরণ করেছে। এসব চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাপিছু হিসাব করলে জনপ্রতি পড়বে দেড় কেজির একটু বেশি। এছাড়া টাকা বিতরণ হয়েছে মাত্র দশ লাখ। মাথপিছু ভাগ করলে প্রতিজন পাবেন সাড়ে ৮ টাকার একটু বেশি। এ ছাড়া ৭টি উপজেলায় মাত্র ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি প্যাকেটে ৪০০ টাকার পণ্য রয়েছে। অসংখ্য মানুষ খাবারের জন্য মানবেতর জীবন যাপন করলেও তারা ত্রাণ পাচ্ছেন না।

বানিয়াচং উপজেলার চান্দের মহল্লার কলেজ ছাত্র শাকিল আহমেদ বলেন, পাঁচদিন ধরে তার এলাকার মানুষ পানিবন্দী। সেখানে অনেক অস্বচ্ছল মানুষ থাকলেও এখনও পর্যন্ত সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে ত্রাণ পায়নি কেউ। একই চিত্র দেখা গেছে, উপজেলাটির গুচ্ছগ্রাম, পিরিজপুর, নোয়াগাঁও এবং বদলপুর গ্রাম ঘুরে।

আজমিরীগঞ্জের হিলালপুর গ্রামের ওয়ারিশ মিয়া বলেন, তিনি আশপাশের কয়েকটি পরিবারকে তার ঘর থেকে কয়েকবার খাবার দিয়েছেন। কিন্তু এতে তাদের চলছে না। এখনও পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ না পাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

তারা বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা ছাড়া বন্যা কবলিতদের অধিকাংশই ত্রাণ পাচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণে অপ্রতুলতা দূর করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নবীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, বাহুবল, মাধবপুর, আজমিরীগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ২৩৫টি পরিবার। ২০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ২০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষদের জন্য ২২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করে তা সক্রিয়ভাবে চালু রাখা হয়েছে।