তাহলে কি আওয়ামী লীগ-জামায়াত পরকীয়া চলছে: ইকবাল হাসান মাহমুদ

তাহলে কি আওয়ামী লীগ-জামায়াত পরকীয়া চলছে: ইকবাল হাসান মাহমুদ

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটিকে বেআইনি ঘোষণা না করার পেছনে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন সম্পর্ক কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু)।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার সিকদার রিয়েল এস্টেট–সংলগ্ন একটি মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ এ কথা বলেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মুখে প্রায়ই শুনি, যেটা বুলি হয়ে গেছে। তারা প্রায়ই বলে, বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-জামায়াত। আমি বলছি, এখন সময় এসেছে আওয়ামী-জামায়াত, আওয়ামী–জামায়াত বলার। জামায়াতও উর্দু, আওয়ামী লীগও উর্দু—দুটো একসঙ্গে মিলবে ভালো। কেননা, ওনারা (আওয়ামী লীগ) জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে, কিন্তু বেআইনি ঘোষণা করে না। তাহলে কি আমি বলব, ওনাদের পরকীয়া প্রেম চলছে!’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা বলেন যুদ্ধাপরাধী দল। আমি অস্বীকার করি না, কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করলেন, বেআইনি ঘোষণা করলেন না। তার অর্থ আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে তলেতলে বন্ধুত্ব করছে, তার জন্য বাতিল করে না। তাই আজ থেকে আওয়ামী-জামায়াত হবে, বিএনপি-জামায়াত আর হবে না।’

সমাবেশের অনুমতি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রাতে শুনলাম, আমরা ধানমন্ডিতে বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজের সামনে মিটিং করব। ঘণ্টা দুই পর শুনলাম এই জায়গা বাতিল করেছে। তারপর রাত থেকে এখানে না ওখানে, ওখানে না ওইখানে, হায় রে আমার বাংলাদেশ! বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র আছে। ওসি অনুমতি দিলে আমরা মিটিং করতে পারব, ওসি অনুমতি না দিলে মিটিং করতে পারব না।’

সরকারের সমালোচনা করে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আজ গণতন্ত্র তোমরা লুট করে নিয়েছ। আমরা কিছু বললে বলে পাকিস্তানের দালাল। আরে আপনারা অন্যায় যেটা করছেন, আমরা তো পাকিস্তান আমলে রাজনীতি করেছি। আমাদের ওসির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মিটিং করতে হয়নি। সুতরাং আপনারা তাদের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছেন। খারাপ তো খারাপ, খারাপের চেয়েও খারাপ।’

‘লাঠি আপনারা তুলে দিয়েছেন’

গত কয়েক দিনের মতো আজকের সমাবেশেও বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি হাতে আসেন। এর উল্লেখ করে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আজ আমি হঠাৎ করে দেখলাম, আমার ছেলেদের হাতে লাঠি। আমি একটু শঙ্কিত হলাম। কারণ, একটু আগে আমার বন্ধু শাহজাহান ওমর বলে গেছেন, আমাদের দেশের একটা গোষ্ঠী আছে—যারা কানা, বোবা, অন্ধ। তারা বলবে, বিএনপি সহিংস হয়ে গেছে।’

ইকবাল হাসান বলেন, ‘বিএনপি যে আজ কোন দুঃখে লাঠি নিয়ে এসেছে, সেটা বলবে না। আজ বিএনপির কর্মীদের মারতে মারতে এমন একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে যে তারা আত্মরক্ষার্থে লাঠি হাতে নিয়েছে। তারা আজ আত্মরক্ষা করছে, আরেক দিন আক্রমণ করলে প্রতিহত করবে। সুতরাং টেলিভিশনে গিয়ে টক শোতে গিয়ে বিএনপির লাঠি নিয়ে আলোচনা কইরেন না। লাঠি আপনারা তুলে দিয়েছেন। বিএনপির কর্মীরা নিজ ইচ্ছায় লাঠি হাতে নেয়নি।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মিটিং করব, একবার বলবেন এখানে, আরেকবার বলবেন ওখানে, আরেকবার বলেন হবে না। তারপর এমন সময় অনুমতি দেবেন, তখন আবার ওনারা (আ.লীগ) অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসবেন। আমি আসার সময় একজন বলল, “ভাই, ওদিকে যাইয়েন না।” আমি বললাম, কেন? বলে, “ওখানে ওরা আক্রমণ করছে।” আমি বললাম, পাকিস্তান আর্মি আমাদের মারতে পারেনি, বাংলাদেশের কারও হিম্মত নাই—শাহজাহান ওমর, আমরা যারা বসে আছি, আমাদের মারতে পারে। মরলে হাসিমুখে মরব, বাংলাদেশের একটা মুক্তির জন্য মরব।’

রয়েসয়ে কাজ করুন: পুলিশকে শাহজাহান ওমর

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা, আপনাদের জানাতে চাই, কোনো সরকার শেষ সরকার নয়। সবারই পতন আছে। সুতরাং রয়েসয়ে কাজ করুন। আপনাদের জীবন অনেক লম্বা। হয়তো ২৫ থেকে ৪০-৫০ বছর বয়স। আল্লাহ চায় তো ৩০ বছর বাঁচবেন। শেখ হাসিনা কি ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকবেন? তখন দাদু আপনাদের অবস্থাডা হবে কী? দালালি কম করেন, জনগণের বন্ধু থাকুন।’

কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের এই ত্যাগ, মিটিংয়ের উদ্দেশ্য একটা। আমাদের সবার উদ্দেশ্য খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বীরের বেশে বাংলাদেশে আনা। শোনা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ৮ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে অবশ্যই আমাদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হতে হবে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও সুশীল সমাজ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেন শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ‘এই সুশীল সমাজ, এই বিবেকবান মানুষ, এই জ্ঞানী-গুণী মানুষ, আপনাদের একটা সামাজিক দায়িত্ব আছে, নৈতিক দায়িত্ব আছে। দেশ যখন রসাতলে যায়, অধঃপতনে যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আমরা শ্রীলঙ্কার দিকে ধাবিত হচ্ছি, তখন আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনারা মুখ–কান বন্ধ করে রাখলে চলবে না, দয়া করে মুখ খুলুন। এই জাতিকে হাসিনার চক্র থেকে রক্ষার জন্য অবদান রাখুন।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঢাকার মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদউদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম।