তাকসিমের ওয়াসায় ঘুষ ছাড়া নিয়োগ হয় না

তাকসিমের ওয়াসায় ঘুষ ছাড়া নিয়োগ হয় না

দরকার ছিল পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশনের ক্ষেত্রে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা; সিনিয়র পর্যায়ে অন্তত ২০ বছর প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দায়িত্ব পালনের আবশ্যকতা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী তাঁর এসবের কিছুই ছিল না। তবু বিজ্ঞপ্তির শর্ত কেটে-ছিঁড়ে তাঁর জন্য তৈরি করা হয় নিয়োগের মসৃণ মঞ্চ। তাঁর মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বাড়াতে করা হয় টেম্পারিং (ঘষামাজা)। শেষমেশ ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) 'জাদুকরী' চেয়ারে বসেন প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এর পর থেকেই ধরাকে সরা জ্ঞান করে হাঁটছেন নানা অনিয়মের পথে। যেন তাঁর অনিয়মের শুরু আছে, শেষ নেই। গত ১৩ বছর 'একনায়কতন্ত্র' জারি করে সরকারের সেবা খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা ওয়াসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ছেড়েছেন তিনি।

কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ- এমডি তাকসিমের অনিয়ম-দুর্নীতি অভিধানের অন্যতম অধ্যায়। তিনি নিজেই অনিয়ম করে বড় পদ বাগিয়ে নিয়ে মেতে আছেন নিয়োগ বাণিজ্যে। তাঁর নেতৃত্বে পদভেদে সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। গভীর অনুসন্ধানে নিয়োগ বাণিজ্যের নানা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে সমকাল।

ওয়াসার একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে মানা হয়নি ওয়াসার সাংগঠনিক কাঠামো। ভেঙে ছারখার করা হয়েছে বিধিবিধান। লক্ষ্য ছিল একটাই- নিয়োগ বাণিজ্য। আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিম্ন পর্যায়ের বিলিং সহকারী ও মেশিন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয় ২ থেকে ৯ লাখ টাকায়। সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সচিব, সহকারী সচিব, উপসহকারী প্রকৌশলীসহ উচ্চ পদের কর্মকর্তা নিয়োগে নেওয়া হয় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আর পরিচালক পদ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকায়।

এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির সব সংবাদের তদন্ত করতে গত ২৬ অক্টোবর ডিএমডি ড. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়ম, দুর্নীতি, আইন লঙ্ঘনের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

তাকসিমের নিয়োগই প্রশ্নবিদ্ধ :তাকসিম এ খানকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওয়াসা বোর্ডকে ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, ভবিষ্যতে ঢাকা ওয়াসার এমডিসহ অন্য পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়া ও নম্বর দেওয়ার বিষয়ে ওয়াসা বোর্ডকে সতর্ক থাকতে হবে।

২০০৯ সালে তাকসিমকে নিয়োগ দেওয়ার সময় ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফা। এখনকার বোর্ডেরও চেয়ারম্যান তিনি। ২০০৯ সালে তাকসিমের নিয়োগ-সংক্রান্ত সুপারিশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন ড. গোলাম মোস্তফা। তাঁর সুপারিশেই মন্ত্রণালয় থেকে তাকসিম এ খানকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. গোলাম মোস্তফা সমকালকে বলেন, ২০০৯ সালে তাকসিম এ খানের নিয়োগের সময় অন্য কোয়ালিফিকেশনে (যোগ্যতা) ঘাটতি থাকলেও তাঁকে দেশপ্রেমিক, সৎ, যোগ্য ও কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচনা করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় তাকসিম এ খানের মৌখিক পরীক্ষার নম্বরপত্রে ঘষামাজা করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

তাকসিমের নেতৃত্বে যত নিয়োগ বাণিজ্য

দুই পরিচালক : ২০১৮ সালে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সুপারিশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিএমডি (আরপিডি), ডিএমডি (ও অ্যান্ড এম) এবং ডিএমডি (অর্থ) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে ওয়াসায় গেলে এমডি তাকসিম তাঁদের যোগ দিতে দেননি। পরে এমডি প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়াসার জনবল কাঠামোর বাইরে পরিচালক পদে দু'জনকে নিয়োগ দেন। তাঁরা হলেন- একেএম শহিদ উদ্দিন ও মো. আবুল কাশেম। পরে নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশও মানেননি তাকসিম এ খান। পরে দুই পরিচালকের চাকরির মেয়াদ ফুরালে মাসিক দেড় লাখ টাকা বেতনে আবুল কাশেমকে এমডি তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। অথচ জনবল কাঠামোতে উপদেষ্টা নামে কোনো পদই নেই। আর শহিদ উদ্দিনকে ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমডি তাকসিম দেশে না থাকলে শহিদ উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করেন। বেআইনিভাবে এ দুই পরিচালকের নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

কো-অর্ডিনেশন কর্মকর্তা : বিধি ভেঙে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী নিরাপত্তা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. এনায়েত আবদুল্লাহকে কো-অর্ডিনেশন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে নিয়োগ দেওয়ার আগে তাঁর চাকরি স্থায়ী করা হয়। পরে তাঁকে ওয়াসা বোর্ডের সহকারী সচিব ও কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে।

সিস্টেম অ্যানালিস্ট : সিস্টেম অ্যানালিস্ট (জিআইএস), জিআইএস স্পেশালিস্ট, প্রোগ্রামার ও মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার- এই চার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০১১ সালের ১৮ মে। এর মধ্যে সিস্টেম অ্যানালিস্ট (জিআইএস) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। এ পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা পদার্থ, ফলিত পদার্থ, গণিত, পরিসংখ্যান, বাণিজ্য, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান বা ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল।

অথচ সিস্টেম অ্যানালিস্ট (জিআইএস) পদে নিয়োগ পাওয়া কাজী মুহাম্মদ খালিদ আহসানের আবেদনে ভূগোলে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি উল্লেখ ছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত পূরণ করা না হলেও টাকার বিনিময়ে কারসাজি করে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উপসহকারী প্রকৌশলী : ২০১৩ সালে উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগের সময় বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হয়েছিল। এই পদে নিয়োগ দেওয়া রিয়া আনাদিন চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল সিরামিকসে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্নিষ্ট সূত্র।

সহকারী সচিব : ২০১১ সালে চার সহকারী সচিব পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ চারজনের মধ্যে মৌসুমী খানকে নিয়োগ দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। এ ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার ফল সমন্বিত হওয়ার কথা থাকলেও বিধি ভেঙে তাঁর ফল মুক্তিযোদ্ধা কোটা হিসেবে আলাদা করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে শুধু মৌখিক পরীক্ষার ফল আলাদা মূল্যায়নের বিধান রয়েছে। তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত করতেই মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে তাঁর লিখিত পরীক্ষার ফল আলাদা করা হয়।

আউটসোর্সিংয়ের রাজস্ব পরিদর্শক : সিন্ডিকেট করে জনবল কাঠামোর বাইরে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় প্রায় ৮০০ জনবল নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। বিধি ভেঙে ২০২০ সাল থেকে রাজস্ব পরিদর্শকের বদলে বিলিং সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। রাজস্ব পরিদর্শকের কাজ হলো মিটার রিডিং, বিল তৈরি ও গ্রাহকের কাছে বিলের কপি পৌঁছে দেওয়া।

আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারের মাধ্যমে লোকবল সরবরাহের কথা থাকলেও ঢাকা ওয়াসার কিছু কর্মকর্তার সিন্ডিকেট জনবল দিয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন- তাকসিম এ খানের স্টাফ অফিসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন, মো. আল আমীন, সচিব শারমিন হক আমীর, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল মজুমদার ও রাজস্ব পরিদর্শক আশকার ইবনে শাইখ খাজা।

আউটসোর্সিংয়ের পাম্প অপারেটর : জনবল কাঠামোতে পদের নাম 'পাম্প অপারেটর' থাকলেও 'মেশিন অপারেটর' উল্লেখ করে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ জনকে। ওয়াসার নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রতি জনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন ২ থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত। এই টাকার বড় একটি অংশ গেছে এমডির পকেটে। সিন্ডিকেট সদস্যরা সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে পানির পাম্প পরিচালনায় ওই জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। এই জনবলের বেতনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা পাচ্ছেন সংশ্নিষ্ট ঠিকাদাররা। আবার এই টাকার একটি অংশ নিয়মিত সিন্ডিকেট সদস্যরাও পাচ্ছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা ওয়াসা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ও এক্সপ্রেস ওয়ান। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের ছায়ায় রয়েছে আরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তাকসিমের যত অনিয়ম

সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা :সচিব পদে যাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হবে; ঢাকা ওয়াসার বিধি অনুযায়ী অবশ্যই তাঁর উপসচিব পদে সাত বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কেউ না থাকলে প্রেষণে শূন্য পদ পূরণের কথা বলা আছে। এসব নিয়ম না মেনে ২০১৮ সালে প্রশাসনিক কাজে অনভিজ্ঞ নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিন হক আমীরকে সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। একইভাবে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগে নিয়ম মানা হয়নি। উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা পদে সাত বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকার পরও ২০১৮ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল মজুমদারকে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

আইন কর্মকর্তা :ঢাকা ওয়াসার জনবল কাঠামোতে আইন কর্মকর্তার কোনো পদ না থাকলেও ২০১৬ সালে তাকসিম এ খানের এক বন্ধুর ছেলে মো. ইকবাল রাকীবকে সহকারী আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদেরও ইনক্রিমেন্ট :ঢাকা ওয়াসা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। প্রচলিত বিধি অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার নিয়ম নেই। তার পরও বিভিন্ন বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা প্রায় ১০০।

পদোন্নতিতেও বেপরোয়া :পদোন্নতির ক্ষেত্রে মানা হয় না কোনো নিয়মকানুন। জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে এমনকি শূন্য পদ না থাকলেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল রশীদ সিদ্দিকী ও আবদুল মান্নান মিয়াকে ডিঙিয়ে কামরুল হাসানকে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়।

কারা কী বলছেন

ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সরকার সমকালকে বলেন, এমডি তাকসিম এ খানের নিজের নিয়োগই প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি এমডি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য অনিয়মে জড়িয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি আইন অনুযায়ী কোনো নিয়োগ দেননি। সংগঠনের সম্পাদক শাহাব উদ্দিন ঢাকা ওয়াসায় এমডিসহ আরও যাঁরা অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ডিএমডি একেএম শহিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ঢাকা ওয়াসায় নিয়োগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। প্রমাণ পেলে প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমডি তাকসিম এ খানের নিয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ- এ বিষয়টির কি তদন্ত করা হবে? এর জবাবে তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় যা যা উঠেছে, সবই তদন্ত করা হবে। এমনকি তাঁর নিজেরটাও।

দুদকের অনুসন্ধান শুরু

তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট এবং অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে অভিযোগবিষয়ক সব নথি ঢাকা ওয়াসা থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি শহিদ উদ্দিনসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে গত ১৯ অক্টোবর। সংশ্নিষ্ট আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সর্বশেষ তাকসিম এ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে গত ২৪ মে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সমকালকে বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত মিলেছে। এর আলোকে কমিশন অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, দুদক আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

কথা বলেননি এমডি তাকসিম

তাকসিম এ খান গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে অফিসও করেছেন। দেশে আসার খবর জেনে নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে গতকাল মঙ্গলবার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে তিনি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে এ প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, তিনি সরাসরি টেলিফোনে কথা বলবেন না। তাঁকে মেসেজ পাঠিয়ে বক্তব্য জানার অনুরোধ করা হয়। এর পর তাঁর মোবাইলে ৬টা ৪৬ মিনিটে মেসেজ পাঠিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। এর পর তিনি তাঁর কোনো বক্তব্য জানাননি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি তা দেখলেও কোনো সাড়া দেননি।-সমকাল