১৫ দিনেও কৃষকের লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ, অপেক্ষায় স্ত্রী-সন্তানরা

১৫ দিনেও কৃষকের লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ, অপেক্ষায় স্ত্রী-সন্তানরা

ফেনীর পরশুরাম বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকায় নিহত কৃষক মেজবাহারের লাশ ১৫ দিনেও ফেরত দেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তার মরদেহ ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন স্ত্রী, চার কন্যা সন্তান, স্বজনরা। আতংকে রয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

বিজিবি, পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে উপজেলার বাঁশপদুয়া গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশের অংশে ধান কাটছিলেন মেজবাহার। এসময় ভারতীয় বিএসএফ ওই সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে এবং মেজবাহারকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে তাকে কিল-ঘুষি এবং লাথি ও অস্ত্রের আঘাত করে ভারতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। বিষয়টি এলাকার লোকজন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পরশুরাম মডেল থানা পুলিশকে জানান। ১৬ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের সমঝোতা বৈঠকের পর ভারতের সীমারেখার মধ্যে থাকা মেজবাহারের লাশটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। পরদিন ১৭ নভেম্বর লাশ ফেরত দেওয়া হবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিলেও ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ফেরত দেয়নি।

ফেনীর পরশুরাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর গুথুমা গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে মেজবাহার (৪৭) কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু ব্যবসা করতেন। নিহত মেজবাহার মর্জিনা আক্তার মুন্নি (১৮), তাজনেহার আক্তার মুক্তা (১২), বিবি হাজেরা রিক্তা (১০) ও জান্নাতুল নাইমা (৬) চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। এক কন্যাকে বিয়ে দিলে অন্য তিনজন শিশু। লাশ কবে পাবে সে অপেক্ষায় নিহতের অবুঝ ৩টি শিশুসহ ও স্ত্রী মরিয়ম আক্তার (৪২)। স্ত্রী ও সন্তানরা কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। নিজের বসত ভিটে না থাকায় মেজবাহারের পরিবার অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। অসহায় পরিবারটি লাশ ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী মো: রুহুল আমিন, মো: আলমগীর বলেন, পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মেজবাহার। বিএসএফ মেজবাহারকে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে। আমরা লাশ ফেরত চাই। প্রতিদিন স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ও তার অবুঝ শিশুরা চোখের পানি ফেলছে ও সীমান্তের কাঁটা তারের দিকে তাকিয়ে আছে, কবে আসবে মেজবাহারের লাশ। কৃষক মেজবাহারের লাশ ভারত থেকে দ্রুত ফেরত এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। আমাদের বাঁশপদুয়া এলাকার তিন পাশে সীমান্ত। এই সীমান্ত এলাকায় জায়গা জমি ও বাড়িঘর রয়েছে। বিএসএফ অনেক সময় সীমারেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মেজবাহারের মত আর কোন ঘটনা যেন না ঘটে এ জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

মেজবাহারের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার, ও মেয়ে মর্জিনা আক্তার মুন্নি, তাজনেহার আক্তার মুক্তা, বিবি হাজেরা রিক্তা ও জান্নাতুল নাইমা বলেন, বিএসএফ মেজবাহারকে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে। আমরা লাশ ফেরত চাই। প্রতিদিন সীমান্তের কাঁটা তারের দিকে তাকিয়ে থাকে কবে আসবে মেজবাহারের লাশ।

মেজবাহারের স্বজন জামাতা নুরুল করিম বাদশা, জরিনা আক্তার ও রহিমা আক্তার বলেন, বিএসএফ অন্যায়ভাবে মেজবাহারকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার সুষ্ঠ দাবী করছি। মেজবাহারের লাশ দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া এবং পরিবারের ভরন পোষণের দায়িত্ব নেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

পরশুরাম পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুমন বলেন, কৃষক মেজবাহারের লাশ ভারতীয় বিএসএফ নিয়ে যাওয়ার ১৫ দিনেও ফেরত দেয়নি। মেজবাহারের পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে প্রতিদিন লাশের অপেক্ষায় থাকি। সরকারের কাছে মেজবাহারের লাশ ফেরত আনা ও পরিবারের ভরন পোষণ অনুরোধ করছি। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী করছি।

পরশুরাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতে ময়নাতদন্ত ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। সম্ভবত বিএসএফ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। এজন্য লাশ দেয়নি। ফেরত দিলে আমরা নিহতের লাশ তার স্বজনদের বুঝিয়ে দিব।

ফেনীর ৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল একেএম আরিফুল ইসলাম বলেন, পরশুরাম বাঁশপদুয়া সীমান্তের মেজবাহারের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারতের বিএসএফ ও পুলিশ মেজবাহারের লাশ ফেরত দিলে আমরা পরিবারকে বুঝে দিব।