ঢাকায় বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রা

স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছে আওয়ামী লীগ: খন্দকার মোশাররফ

স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছে আওয়ামী লীগ: খন্দকার মোশাররফ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশে ও বিদেশে অগণতান্ত্রিক, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হাইব্রিড সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ এই সরকারকে দেখতে চায় না, এটা বুঝতে পেরে এখন তারা (আওয়ামী লীগ) দিশাহারা হয়ে নানা কথা বলছে। সরকার যখন দেখেছে তাদের দিন শেষ, তখন দেশে-বিদেশে মিথ্যাচার করছে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রা শুরুর আগে বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা আড়াইটা থেকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় নেতা-কর্মীরা আসা শুরু করেন। জুমার নামাজের আগেই হাজারো নেতা-কর্মী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা সেখানেই জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রার একেবারে পেছনের সারিতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে নয়াপল্টন এলাকা অতিক্রম করেন। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার হওয়া দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন।

শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন এই কর্মসূচির উদ্বোধক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে মঞ্চ তৈরি করা হয়।

সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য লাখের বেশি মিথ্যা মামলা করেছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে তারা (আওয়ামী লীগ) নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করছে।

বিএনপি অরাজকতা করতে মাঠে নেমেছে—ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ১০টি গণসমাবেশ হয়েছে। সেখানে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা হয়নি। অরাজকতা করে থাকলে আওয়ামী লীগ করেছে। কারণ, তারা গণসমাবেশ যাতে সফল না হয়, এ জন্য প্রতিবন্ধকতা ও বাধা তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার পর তারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছে। রক্ষীবাহিনী দিয়ে ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাট করে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানেও তাদের লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে। এ জন্য দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে।

১০ দফা এ দেশের জনগণের দাবি উল্লেখ করে সরকারকে বিদায় করতে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করবেন।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার উসকানি দিচ্ছে। আপনারা কান দেবেন না। সরকারের উসকানিতে পা দেবেন না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’

শোভাযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আহমদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ, সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।