ব্রিটিশরাও এত টাকা লুটপাট করেনি, যত টাকা ব্যাংকগুলো থেকে লুট হয়েছে: সিপিডি  

ব্রিটিশরাও এত টাকা লুটপাট করেনি, যত টাকা ব্যাংকগুলো থেকে লুট হয়েছে: সিপিডি   

 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা বলেছেন, দেশের বিদ্যমান ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। একটা গোষ্ঠী ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলো গিলে খাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে লুটপাট চলছে। ব্রিটিশরাও এত টাকা লুটপাট করেনি, যত টাকা বর্তমানে ব্যাংকগুলো থেকে লুট হয়েছে।

আজ শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘সংকটে অর্থনীতি: কর্মপরিকল্পনা কী হতে পারে?’ শীর্ষক এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। 

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ প্রমুখ।

সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি নীতিহীন অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। আমরা সংসদে ভুলগুলো উত্থাপন করলে, তা উত্থাপন পর্যন্তই থাকে। বর্তমানে যেভাবে ব্যাংকে লুট চলছে, বৃটিশরাও এভাবে এ দেশ লুট করেনি। চাটার দল আস্তে আস্তে ব্যাংক গিলে খাচ্ছে। ২৫ বিলিয়ন রিজার্ভ নিয়ে এত শঙ্কা কেন সরকারের। এ ছাড়া যে মেগা প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, তা থেকে মেগা ইনকাম আসছে না।’

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিনার করে ফুর্তি করা না। প্রচুর মানুষ কীভাবে বিদেশে বাড়ি বানিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করুন। আমরা দেশে দক্ষ লোক না বানিয়ে অদক্ষ ভিখারি বানিয়ে ফেলেছি। আর এ অর্থনীতির সংকটে আমরা অর্থমন্ত্রীকে দেখতে পাচ্ছি না। তিনি পদ্মফুলের মতো বছরে একবার ফোটেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থনীতির মূল সংকটের একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতা। তারা বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। অথচ ভারতের মতো রাষ্ট্রে চারবার মুদ্রানীতি ঘোষিত হয়। এটা তো বাজেট না যে, বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।’

সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতে মূলত স্বচ্ছতার অভাব। ডাটা পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। কয়েকবছর আগে ব্যাংক খাত সংস্কার করা হলো। কিন্তু দেখা গেল, এটা উল্টোরথে গেল। তাদের জিজ্ঞেস করেন কারেন্ট অ্যাকাউন্ট কীভাবে বাড়ল? তারা কোথায় এ বিনিয়োগ বাড়াল?’

পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, ‘ঝড়ের আগে পরিবেশ খুব ঠাণ্ডা থাকে। কিন্তু যখন প্রলয় এসে যায়, করার কিছুই থাকে না। দেশের অর্থনীতিরও একই অবস্থা। ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ক্রমান্বয়ে কমছে। কিন্তু ভারতের মতো রাষ্ট্রে তা ১৯-২০ শতাংশ। তাদের ক্যাপাসিটি টু অ্যাবজর্ব আর আমাদের ক্যাপাসিটি টু অ্যাবজর্ব কি এক হলো?’

আহসান হাবিব বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, জানুয়ারির মধ্যে ডলার সংকট কেটে যাবে। আমি বলি, আগামী ছয়মাসেও ডলার সংকট কাটবে না। আরও বেশি সময় লাগতে পারে। ব্যাংকে সংকট এত প্রকট যে, অল্প কয়েকদিনে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, এটা তো তলাবিহীন ঝুড়ির মতো। রিজার্ভের হিসাবে কোনো আন্তর্জাতিক নিয়ম নেই। তবে, সরকারকে ধন্যবাদ আইএমএফের সঙ্গে খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ব্যাংক খাতের সংকট তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের ব্যাংকের খাতের চলমান সংকট কোভিড কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নয়, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দুর্বল শাসন ও সংস্কারের অভাবে এ সংকট তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের দুর্বলতা কোভিডের কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি হয়নি। এই খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতার মুখোমুখি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, বিভিন্ন সূচকে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। দুর্বল সুশাসন ও সংস্কারের অভাবে এই খাত ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।’