আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে: বিএনপি মহাসচিব

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে: বিএনপি মহাসচিব

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বুধবার নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এই মন্তব্য করেন। ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি আজকের সমাবেশ থেকেও নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনদের পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন কর্মসূচি দিই, তখন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। এদের এত ভয়, নিজেদের ওপর এত আস্থার অভাব, এই ভয়ে তারা কর্মসূচি দেয়। নিজেদের ওপর কোনো আস্থা নেই তাদের।

পৃথিবীতে কোনো স্বৈরচারী সরকার এমনি এমনি যায়নি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, এরা এমনি এমনি যায় না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরাতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আওয়ামী লীগ সরকার সরছে।

তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে। প্রতিবার, প্রতিক্ষণে, প্রতিদিনই তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রকে হত্যা করে চলেছে এবং আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে ফেলেছে। তাই আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই সরাতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এদের সময় হয়ে গেছে। এবার এদের (আওয়ামী লীগ সরকার) যেতে হবে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, যারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আমার ভাইদের হত্যা করেছে, আমার ভাইদের গুম করেছে, আমাদের ছেলেদের আহত করেছে, কারাগারে নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, সেই ঋণ শোধ করার জন্য এদেরকে অবশ্যই যেতে হবে। 

আওয়ামী লীগ কখনও গণতন্ত্র বিশ্বাস করতো না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু কাজ করে উল্টো। তারা ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। আওয়ামী লীগের ইতিহাস সন্ত্রাসের ইতিহাস। এই সন্ত্রাস করে করেই আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। 

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন। কোন রাষ্ট্রপতি? যে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই, সেই রাষ্ট্রপতি? আমরা রাষ্ট্রপতির আসনটাকে খুব সম্মান করি। কারণ যেই থাক, যেই হোক, যে দলেরই হোক, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কি তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন? তিনি কি প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটা কাজ করতে পারেন? তিনি কি নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন? তিনি কি একটা আইন পরিবর্তন করতে পারেন? পারেন না। সেই কারণে আমরা আমাদের ২৭ দফার মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছি, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে।

বিএনপির চলমান আন্দোলন চলতেই থাকবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই আওয়ামী লীগ সরছে, আমাদের কারাবন্দি ভাইদের মুক্ত করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চলবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সফল হচ্ছে। প্রতিদিন জনগণ আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হচ্ছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমাদের অবশ্যই আগামী দিনগুলোতে সফল হতে হবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের জয়ী হতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের বাকশাল থেকে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিল। আর খালেদা জিয়া স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আর বিএনপি সবসময়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে এই সরকারকে বিদায় করতে পারলেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষ কারো দাসত্ব মানে নাই, একদলীয় বাকশালও মানে নাই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে নেমেছি, আন্দোলনে থাকব। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, ড. মঈন খান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন প্রমুখ।