মাদারীপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ১৫

মাদারীপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ১৫

মাদারীপুরে কিশোরদের ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার থেকে ১০টা পর্যন্ত সদর উপজেলার নয়াচর-মধ্য খাগদীর সীমান্তবর্তী এলাকার আবদুল মান্নান সেতুর দুই প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ পুলিশ সদস্যসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাতেই ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—জেলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আবুল কাশেম (৩৪), চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. রোমান (৩৩), সদর থানার কনস্টেবল মো. সাগর (২৫), নয়াচর এলাকার আচমত খাঁ ছেলে সাব্বির খাঁ (২৪), কুদ্দুস মুনশির ছেলে জয়নাল মুনশি (২৩), আসলাম মোল্লার ছেলে রাজু মোল্লা (২০), বেল্লাল ফকিরের ছেলে আল-আমিন (২৫)।

আটক ব্যক্তিরা হলেন—নয়াচর এলাকার মোকসেদ মোল্লার ছেলে মিঠু মোল্লা (২৫), একই গ্রামের আসলাম মোল্লার দুই ছেলে রাসেল মোল্লা (২১) ও রাসেদ মোল্লা (১৮) এবং ১৩ ও ১৪ বছর বয়সী দুই কিশোর।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মধ্য খাগদী এলাকার টিটু খানের ছেলে মনা খানের সঙ্গে নয়াচর এলাকার কুদ্দুস ফরাজির ছেলে ফরিদ ফরাজির কথা-কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে মনা ও ফরিদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এদিকে মারামারির খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত আটটার দিকে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে।

খবর পেয়ে পুলিশ আবদুল মান্নান সেতুর দুই প্রান্তে অবস্থান নিলে দুই পক্ষের হামলার স্বীকার হয়। এ সময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করে।

এদিকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমে কিশোরদের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। তবে পরে দুই গ্রামের যুবকেরা দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সেতুর দুই প্রান্ত থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

হামলায় আহত চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. রোমান বলেন, ফুটবল খেলা নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করেই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর প্রথমেই পুলিশ দুই পক্ষের লোকজনকে সেতুর দুই পাড় থেকে সরিয়ে দেয়। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই আগের চেয়ে আরও বেশিসংখ্যক লোকজন নিয়ে সেতুর দুই প্রান্তেই জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পরে পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক। আবার সংঘাত এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ইতিমধ্যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্য ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।