দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে: বিএনপি

দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে: বিএনপি

 

সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বারবার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানিতে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিনামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা ও অর্থনৈতিক আয় বৈষম্যের কারণেই এই নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে জনজীবন এখন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকয়টি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেনো এক ‘নাই’ এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই হাহাকার অবশ্য সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। তারা সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দেদারসে অর্থ লোপাট করছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরিব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তাদের চিরাচরিত ডেনিয়েল সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে এসে আইএমএফের কাছে পাঠানো পত্রে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্যোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে। আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং আলিগার্কদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার সরে না গেলে সংকট যাবে না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে। আজকের ডলার ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরির প্রধান কারণ ঋণ করে কম প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ। যার কিস্তি শোধ করতে গিয়ে এখন রিজার্ভে টান পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ এর নামে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা করে লুট করা হয়েছে। দেশের গ্যাস উত্তোলন না করে এলএনজি ও কয়লা বেশি দামে বিদেশ থেকে কেনা হচ্ছে। ঋণ খেলাপিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে চার লক্ষাধিক কোটি টাকা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে। আইএমএফ যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা প্রবাসীদের পাঠানো দুই মাসের আয়ের সমান। প্রতি বছর দেশ থেকে যে পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে তা রোধ করা গেলে এই ঋণ নেওয়ার কোনো দরকারই হতো না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। এই সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। কারণ এরা এত বেশি দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে যাবে, এরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, মনিটরিং সিস্টেম সব কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। ব্যাংকগুলো ভয়াবহভাবে ব্যাংকক্রাফট হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারণা, ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু এর থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে- এই সরকারের চলে যাওয়া।’

বিএনপি নেতারা বলেন, আমাদের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দুরীভূত করা সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।