‘নিজের জিনিসপত্র ও শরীরের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হবে’

‘নিজের জিনিসপত্র ও শরীরের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হবে’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, নিজের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ও শরীরের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হবে।

সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

মহিদ উদ্দিন বলেন, ঢাকায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত দুই দিনে ১৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশ সদস্য খুন ও একজন সংবাদকর্মীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় করা মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- রাব্বি (২১), লিটন (২১) ও কামরুল ইসলাম (৩৫)। ছিনতাই করা মোবাইল ফোন সেট ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। 

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এবার ঈদে পরপর দু’টি ঘটনা সবাইকে নাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনা হচ্ছে- ঈদের দিন রাতে হাতিরঝিল এলাকায় একজন সাংবাদিক ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে আহত হয়েছেন। আর অন্য আরেকটি হচ্ছে আমাদের একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিনতাইকারীদের হামলায় ফার্মগেট এলাকায় নিহত হয়েছেন। এই দুই ঘটনায় পুলিশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে ডিসি এবং সব থানার থানার ওসিদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। এছাড়া আরও ছোটখাট কিছু ঘটনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, গরুর বেপারিদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্তেও অগ্রগতি হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা রোধে সব ধারনের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে গাড়িতে ওঠা যাবে না, এটা স্মরণে রাখা জরুরি। দুই কোটির মানুষের শহর ঢাকা। পৃথিবীর দেশেও এতো জনসংখ্যা নেই। পুলিশ যদি সম্মিলিত চেষ্টা না চালাত, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ দেখা লাগত। কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।  

তিনি আরও বলেন, ছিনতাকারীদের গ্রেপ্তারের পর আবার তারা জামিন নিয়ে বের হয়ে সমাজের মূল স্রোতধারায় মিশে যায়, পুলিশ হিসেবে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আবার সমাজ সম্পূর্ণ অপরাধমুক্ত হবে, এটা বাস্তবে কঠিন। ইংল্যান্ডের মতো দেশে ১ থেকে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার পর কী অবস্থা হয়েছিল, তা আমরা দেখেছি। ইউরোপের মতো দেশেও প্রচুর চুরি হচ্ছে। তাদের তো অন্ন-বস্ত্রের অভাব নেই। আবার মোবাইল ফোনের মতো জিনিসপত্রের নিরাপত্তায় প্রত্যেকের নিজের সজাগ থাকা দরকার।

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, পার্সোনাল বিলংগিংস বা ব্যক্তিগত ছোটখাটো জিনিসপত্র ও নিজের শরীরের নিরাপত্তা প্রত্যেককে তার নিতে হবে। রাষ্ট্রের অবশ্যই নিরাপত্তার দায়িত্ব আছে। কিন্তু কেউ যদি রাতের বেলায় মুঠোফোনে কথা বলে... অনেকে গাড়ির মধ্যে বসে কথা বলে, কিন্তু মুঠোফোনটি বাইরে রাখেন। এতে টান দিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। 

মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, সাংবাদিককে আহত করার ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের আমরা শনাক্ত করে ফেলেছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুত আমরা সুসংবাদ দিতে পারব বলে আশা করি। কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় আরও কিছু কাজ আমাদের বাকি রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করতে পেরেছি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যের গতিরোধ করে তিন ছিনতাইকারী। এ সময় পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান তাদের বাধা দেন। এরপর তাকে ছুরিকাঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ঈদের আগে ১ হাজার ৭৬৪ জন ছিনতাইকারীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪৫ জনকে ধরা হয়েছে। 

তিনি বলেন, যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাস্তাঘাট, মার্কেট, শপিংমল ও কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রিক নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করে। তারপরও ‘অ্যাবসোলুট’ সিকিউরিটি বলতে কোনো কিছু নেই। যদি অ্যাবসোলুট সিকিউরিটি বলতে কিছু থাকতো, তাহলে হয়ত সারাবিশ্বে আলাদা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন হতো না।

নিহত মনিরুজ্জামানের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান প্রভিডেন্ট ফান্ডের ইন্টারেস্টের টাকা নিতেন না। তিনি খুব সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি যে- বাংলাদেশ পুলিশে এ ধরনের কনস্টেবল আছে। তার বয়স মাত্র ৪০ বছর, এই সময় তাকে আমরা হারিয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, ঢাকার যেসব এলাকায় ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের গাফিলতি ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিসি ও ওসি জবাবদিহি করতে হচ্ছে।