বিদায়ী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে ধস

বিদায়ী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নে ধস

বিদায়ী অর্থবছরে (২০২২-২৩) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। ওই অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছিল সংশোধিত বরাদ্দের ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওয়েবসাইটে গতকাল এডিপি বাস্তবায়নের এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে মোট ব্যয় করতে পেরেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে সারাদেশে উন্নয়ন কাজে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছিল। গেল অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বাস্তবায়ন সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে মার্চ মাসে তা কাটছাঁট করে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, গত অর্থবছরে বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, টেন্ডারিং প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদাররা কাজ এগিয়ে নিতে পারেননি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়েছিল অনেক প্রকল্পের কাজ। গুরুত্বের বিচারে অনেক প্রকল্প আমাদের সংশোধনও করতে হয়েছে।মূলত এই কারণে গত অর্থবছরে বাস্তবায়ন কম হয়েছে বলে আমি মনে করি।

কোভিড মহামারী পেরিয়ে ঘুরে দাড়ানোর মুহূর্তে ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে গত অর্থবছর কিছুটা সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামাল দিতে চলমান প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার বিচারে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

কর্মকর্তারা বলছেন, ওই প্রক্রিয়াতেও অনেক প্রকল্পে চাহিদামত অর্থ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন সাময়িক বন্ধ ছিল। এসব কারণে এডিপি বাস্তবায়ন সার্বিকভাবে পিছিয়ে পড়ে।

এদিকে বরাবরের মতই গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়। মে মাস পর্যন্ত অর্থ ব্যয় ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। আর জুনের ৩০ দিনের অর্থব্যয়ে মোট ব্যয় ২ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়, বাস্তবায়নের হার পৌঁছায় ৮৪ শতাংশে।

এডিপি মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, প্রায় ৯৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে সেতু বিভাগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ, ৯৩ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বরাদ্দের ৯১ শতাংশ, রেল মন্ত্রণালয় ৯০ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯০ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮৯ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৮৭ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৮৫ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৮২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৮২ শতাংশ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৭৭ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ৭৬ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ৭১ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৬৮ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে।

এদিকে এডিপি বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ডলার সংকটের কারণে দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস নির্মাণে কোনো কাজই হয়নি। মন্ত্রণালয়টি গত অর্থ বছরে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি উন্নয়ন খাতে। ২৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। তাদের ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তারা খরচ করেছে ২৫ কোটি টাকা। ৩৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। তারা খরচ করেছে ১৭০ কোটি টাকা। যেখানে তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৪৩১ কোটি টাকা। ৪৬ শতাংশ এবিপি বাস্তবায়ন করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। গত বছরে তাদের ৭৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তারা খরচ করতে পেরেছে মাত্র ৩৫১ কোটি টাকা।