অধিকারের সম্পাদক আদিলুরের রায় আজ হবে না, নতুন তারিখ নির্ধারণ

অধিকারের সম্পাদক আদিলুরের রায় আজ হবে না, নতুন তারিখ নির্ধারণ

রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে অধিকারের সম্পাদক ও পরিচালকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া মামলার রায় আজ হবে না। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর রায়ের জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত ।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এএম জুলফিকার হায়াত রায়ের নতুন এই তারিখ নির্ধারণ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম। অপরদিকে আদিলুরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া। পরে রুহুল আমিন ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিচারক মামলার রায় প্রস্তুত করতে না পারায় আজ রায় হয়নি। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টায় রায় ঘোষণার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আশা করি রায়ে দুই জনই বেকসুর খালাস পাবেন। কারণ আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। রাষ্ট্রপক্ষও অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হননি।

এদিকে মামলার রায় পর্যবেক্ষণ করতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম উপস্থিত ছিল। উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দও।

মামলার দুই আসামি হলেন অধিকার-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান।

আদিলুর রহমান খান পেশায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর পরিচালক নাসির উদ্দীন এলান অধিকারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।

২০১৩ সালে দায়ের হওয়া এই মামলার আসামি অধিকার’র সম্পাদক আদিলুর এবং সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান। তারা এখন জামিনে আছেন। ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার ঘটনায় ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই সংখ্যাটি ১৩ বলে জানানো হয়। এই ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ওই বছরের ১০ই জুন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। একই বছরের ১০ জুলাই তালিকাটি চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় অধিকার। পরে ১০ আগস্ট গ্রেপ্তার হন অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। পরদিন সংগঠনটির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটারে পাওয়া যায় ৬১ জনের নামের তালিকা। নিম্ন আদালত জামিন নাকচ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ই অক্টোবর ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন আদিলুরের।

তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৩২ জনকে সাক্ষী করে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। ১২ই সেপ্টেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারী শুরু হয় বিচার কাজ। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন বছরের জন্য স্থগিত হয়ে যায় বিচার কাজ। পরে ২০১৭ থেকে শুরু হয় শুনানি।

অভিযোগপত্রে যা বলা হয়ঃ
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেন। আরও বলা হয়, ‘তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়।’