নির্বাচনের আগে ইউনূসের বিষয়টি কেবলই আইনি দাবি করা কঠিন: মার্কিন সংবাদমাধ্যম

নির্বাচনের আগে ইউনূসের বিষয়টি কেবলই আইনি দাবি করা কঠিন: মার্কিন সংবাদমাধ্যম

বাংলাদেশে যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ঠিক সেই মুহুর্তে সরকারের পক্ষে এমন দাবি করা কঠিন যে, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার বিষয়টি কেবলই আইনি বিষয়। সমালোচকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর)-এর এক প্রতিবেদনে এমন কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে অনেকেই 'গরিবের ব্যাংকার' বলে ডাকেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি খুবই স্বল্প আয়ের মানুষকে সাহায্য করার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে। এতে তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়, অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। তার উক্ত ধারণা বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু, নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশে তিনি নতুন করে আইনি ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন।

এনপিআর-এর পক্ষে দিয়া হাদিদ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রফেসর ইউনূস কারো কারো কাছে বিতর্কিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরেই ইউনূসের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে চলেছেন। ২০০৭ সাল থেকে যখন তিনি নোবেল জেতার পরপর সংক্ষিপ্তভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হাসিনা ও তার দল- আওয়ামী লীগের সমর্থকদের কাছে এটা হুমকির মতোই মনে হয়েছে। ইউ.এস. ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড যেমনটি বলছিলেন, প্রফেসর ইউনূস নিজেকে সম্ভাব্য রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করার পর থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আইনি হয়রানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ী সহ প্রায় দুইশো জন বিশ্বনেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব। উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস বলছিলেন, মুহম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন মামলাগুলোয় কারাদণ্ড দেয়ার মানে তাকে জেলে ঢুকানো।

যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী শাহ আলী ফরহাদের দাবি, ইউনূস বাংলাদেশ সরকারকে ভয় দেখানোর জন্য পশ্চিমা বিশ্বে নিজের শক্তিশালী সংযোগকে ব্যবহার করছেন।

এনপিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে এসবকিছু ঘটছে। সমালোচকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার শাসনামলে দেশটি ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরকারের পক্ষে দাবি করা কঠিন যে প্রফেসর ইউনূসের বিষয়টি কেবলই আইনি বিষয়।

খ্যাতনামা আলোকচিত্রী শহিদুল আলম পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে কয়েক মাস জেল খাটার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, ইউনূসকেও জেলে যেতে হতে পারে এমন ধারণাটি বীভৎস। তার মতে, ড. ইউনূসকে যে নিন্দিত করা হচ্ছে এবং তিনি যে (হেনস্থার) শিকার হচ্ছেন তা মাথায় ঘিলু আছে এমন যে কারো কাছেই স্পষ্ট।