বাংলাদেশে দমনপীড়ন এবং সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন করেছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাদেশে দমনপীড়ন এবং সহিংসতা অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন করেছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর দমনপীড়ন এবং সহিংসতায় অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী নেতাকর্মীকে গণগ্রেপ্তার এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। বৈঠকের ফাঁস হওয়া আলোচ্যসূচিতে দেখা গেছে, দৃশ্যত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করেছেন যাতে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করা যায়।  

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার তাদের ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব কথা বলেছে।

এতে বলা হয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়ার বিষয়ে আস্থা না থাকায় প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে।

বাংলাদেশি মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০০৯ সাল থেকে ৬০০টির বেশি গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসার পর গুমের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর  অত্যাচার ও  গুম আবার বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন বেড়েছে বলে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। জাতিসংঘ গুমের অভিযোগ তদন্তে বিশেষ কৌশল বাস্তবায়নের সহায়তার প্রস্তাব দিলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। 

সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের উচিত তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখার শর্ত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিপীড়নের বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য জোর দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহির অভাব একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্কৃতিকে উস্কে দিচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, এমনকি ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে থাকেন বাংলাদেশিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিকরা ক্রমবর্ধমান আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বার্তাকক্ষ আরও সেলফ সেন্সরশিপের দিকে ধাবিত হয়েছে। প্রধান প্রধান গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি বেড়েছে। নির্বাচনের আগে বিক্ষোভে সহিংসতায় কয়েক ডজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সরকার ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। এই আইনে রদ হওয়া আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেক বিষয় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন ও সরকার সমালোচকদের শায়েস্তা করতে আগের আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ আশ্রয়শিবিরে ক্রমেই বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ফলে শত শত শরণার্থী নৌকায় বিপজ্জনক পথে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে অন্য দেশে ছুটছে। 
৭৪০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০০টিরও বেশি দেশে মানবাধিকার চর্চা পর্যালোচনা করেছে এইচআরডব্লিউ।

সূচনা প্রবন্ধে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান জানান, ২০২৩ সালে শুধু মানবাধিকার দমন এবং যুদ্ধকালীন নৃশংসতার জন্যই নয়, বরং নির্বাচনকালীন সরকারি ক্ষোভ এবং অনৈতিক লেনদেনের জন্যও উল্লেখযোগ্য।